অর্থভুবন ডেস্ক
পদত্যাগ করা বিভিন্ন ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের (এমডি) সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তারই অংশ হিসেবে সাউথ বাংলা অ্যাগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংকের (এসবিএসি) পদত্যাগ করা এমডি হাবিবুর রহমান ও পদ্মা ব্যাংকের তারেক রিয়াজ খানের সঙ্গে আলাদাভাবে আলোচনা করেছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার ও ডেপুটি গভর্নর আবু ফরাহ মো. নাছের। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের কক্ষে গতকাল সোমবার এই আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। ব্যাংক এশিয়ার এমডি পদ থেকে আরিফ বিল্লাহ আদিল চৌধুরীর পদত্যাগের বিষয়ে জানতে আজ মঙ্গলবার ব্যাংকটির চেয়ারম্যান রোমো রউফ চৌধুরীকে বাংলাদেশ ব্যাংকে ডাকা হয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একটি সূত্র জানায়, বর্তমান আর্থিক সংকটের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক চাচ্ছে না নতুন করে কোনো ব্যাংকে সংকট তৈরি হোক। এ ছাড়া ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকেরা যাতে পেশাদারত্বের সঙ্গে ব্যাংক পরিচালনা করতে পারেন, সেটা নিশ্চিতের চেষ্টা করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এই চেষ্টার অংশ হিসেবে এর আগে ন্যাশনাল ব্যাংক থেকে পদত্যাগ করা এমডি মেহমুদ হোসেনকে কাজে ফিরিয়ে এনেছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
■ গত সপ্তাহে পদত্যাগ করেন পদ্মা ব্যাংকের এমডি তারেক রিয়াজ খান।
■ গত ২৬ জুলাই পদত্যাগ করেন ব্যাংক এশিয়ার এমডি আরিফ বিল্লাহ আদিল চৌধুরী।
গত সপ্তাহে এমডি পদ থেকে সরে দাঁড়ান পদ্মা ব্যাংকের এমডি তারেক রিয়াজ খান। এর আগে গত ২৬ জুলাই পদত্যাগ করেন ব্যাংক এশিয়ার এমডি আরিফ বিল্লাহ আদিল চৌধুরী। তাঁরা আর অফিস করছেন না। গত বৃহস্পতিবার এসবিএসি ব্যাংকের এমডি হাবিবুর রহমানও পদত্যাগপত্র জমা দেন। তবে তিনি রোববার থেকে আবার অফিসে যাচ্ছেন।
এই পরিস্থিতিতে পদত্যাগের কারণ জানতে পদ্মা ও এসবিএসি ব্যাংকের এমডিকে ডেকে পাঠায় বাংলাদেশ ব্যাংক। সূত্র জানায়, পদ্মা ব্যাংকের এমডি কেন্দ্রীয় ব্যাংককে জানিয়েছেন, তাঁর স্ত্রী অসুস্থ, তাই তাঁর পক্ষে ব্যাংকে সময় দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। ব্যাংকের কোনো পরিচালক বা চেয়ারম্যানের চাপে তিনি পদত্যাগ করেননি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে তখন তাঁকে বিষয়টি নিয়ে গণমাধ্যমে প্রকৃত তথ্য দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। তা না হলে ব্যাংক খাত নিয়ে আমানতকারীদের মধ্যে ভ্রান্ত ধারণা তৈরি হতে পারে বলে জানানো হয়।
এদিকে এসবিএসি ব্যাংকের এমডি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানিয়েছেন, তিনি আনুষ্ঠানিক পদত্যাগপত্র জমা দেননি এবং নিয়মিত অফিস করছেন। এ সময় গণমাধ্যমে প্রকাশিত তাঁর পদত্যাগ-সংক্রান্ত সংবাদ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি কোনো জবাব দেননি বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়।
ব্যাংক এশিয়ার এমডি আরিফ বিল্লাহ আদিল চৌধুরী কেন পদত্যাগ করেছেন, তা জানতে ব্যাংকটির চেয়ারম্যান রোমো রউফ চৌধুরীকেও ডেকেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তিনি দেশে ফিরে আজ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরের সঙ্গে দেখা করবেন বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকর মুখপাত্র মেজবাউল হক বলেন, পদ ছেড়ে দেওয়া এমডিদের সঙ্গে বৈঠকের বিষয়টি সম্পর্কে তিনি অবগত নন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ‘আগে পরিস্থিতির বিবেচনায় অনেক সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। এখন আমরা চাই না নির্দোষ কোনো এমডি পদ ছেড়ে চলে যাক। কারণ, এই মুহূর্তে ব্যাংক খাত নিয়ে এমনিতেই নানা ধরনের আস্থাহীনতা কাজ করছে।’
এদিকে এসবিএসি ব্যাংকের এমডির পদত্যাগ-সম্পর্কিত খবরের প্রতিবাদে ব্যাংকটি বলেছে, এমডি হাবিবুর রহমানের পদত্যাগ-সংক্রান্ত তথ্য ঠিক নয়। তিনি নিয়মিত অফিস করছেন।
পরিচালকদের চাপে ব্যাংকের এমডিদের পদত্যাগ ঠেকাতে ২০১৪ সালে একটি সুরক্ষা নীতিমালা করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে এই নীতিমালা দৃশ্যত খুব একটা কাজে আসেনি। ২০১৭ সালে ইসলামী ব্যাংক ও সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের মালিকানায় বদল আসার সময় তৎকালীন এমডিদের বাদ দেয় এস আলম গ্রুপ। তখন নতুন এমডি হিসেবে যাঁদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল, তাঁদের ব্যাপারে তড়িঘড়ি করে অনুমোদনও দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এরপর এই দুই ব্যাংকের আর্থিক পরিস্থিতির অবনতি হয়। নামে ও বেনামে ঋণ বের করার তথ্য উঠে আসে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিদর্শনে। ফলে এসব ব্যাংক এখন তারল্য-সংকটে ভুগছে। বাংলাদেশ ব্যাংকে চাহিদামতো তারল্য জমা রাখতে পারছে না। ইসলামি ধারার এই দুই ব্যাংকের সংকটের কারণে পুরো শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকগুলো সংকটে পড়ে গেছে। তারল্য-সংকটে ভুগছে আরও অনেক ব্যাংক।