অর্থভুবন ডেস্ক
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী সুমিত সাহা প্রোগ্রামিংয়ে আগ্রহীদের জন্য বানিয়েছেন ৫০০-এর বেশি ভিডিও। ‘লার্ন উইদ সুমিত’-এর প্রতিষ্ঠাতা তিনি।
শুরুর কথা
সুমিত সাহার জন্ম চুয়াডাঙ্গা শহরে। বাবার সরকারি চাকরির সুবাদে অনেক জেলা শহরের বিভিন্ন স্কুলে পড়তে হয়েছে তাঁকে। ২০০২ সালে রংপুর জিলা স্কুলের শিক্ষার্থী হিসেবে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এসএসসি পাস করেন। এরপর ভর্তি হন নটর ডেম কলেজে।
২০০৪ সালে সেখান থেকে এইচএসসি পাস করেন। মা-বাবার স্বপ্ন ছিল, ছেলে চিকিৎসক হবে। কিন্তু সুমিতের স্বপ্ন ছিল কম্পিউটার বিজ্ঞানে পড়ার। সেই স্বপ্ন সত্যি হয়, ভর্তির সুযোগ পান বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) কম্পিউটার বিজ্ঞান বিভাগে। বুয়েটে প্রথম দুই বছর প্রোগ্রামিং বিষয়ে খুব বেশি পড়াশোনা করা হয়ে ওঠেনি।
পরে তিনি ওয়েব ডেভেলপমেন্টের ওপর আগ্রহী হয়ে ওঠেন। শুরুতে পিএইচপি প্রোগ্রামিং শেখা শুরু করেন। ধীরে ধীরে এইচটিএমএল, সিএসএস, জাভাস্ক্রিপ্ট, নোড জেএস শিখে নেন। প্রোগ্রামিং শেখার পাশাপাশি ফ্রিল্যান্সিংও শুরু করেন সুমিত সাহা।
বুয়েট ক্যাম্পাসে
বুয়েটে পড়া অবস্থায় ২০০৮ সালে এক বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে গড়ে তোলেন ডিজিটাল মার্কেটিং সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান অ্যানালাইজেন বাংলাদেশ লিমিটেড। শুরুতে সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট করত তাঁর প্রতিষ্ঠান।
এরপর তথ্য ও প্রযুক্তি খাতের অন্যান্য সেবা দেওয়া শুরু করে। সুমিতের প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন মোবাইল ফোন সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান, আন্তর্জাতিক কনজ্যুমার প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান, আন্তর্জাতিক মোবাইল ফোন প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান, দেশীয় বড় বড় গ্রুপ অব কোম্পানি, আন্তর্জাতিক ব্যাংকের ডিজিটাল মার্কেটিং সেবা দেওয়ার কাজ করে।
ব্যবসা পরিচালনার পাশাপাশি সুমিত ফুলটাইম চাকরি করেছেন দেশের সেরা কিছু সফটওয়্যার কোম্পানিতে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে। ২০১১ সাল থেকে পুরোদমে নিজের প্রতিষ্ঠানে কাজ শুরু করেন। ২০২০ সালের আগস্ট মাসে তৈরি করেন ‘লার্ন উইদ সুমিত’ নামে একটি ইউটিউব চ্যানেল। এটি একটি এডুটেক প্ল্যাটফর্ম।
বিভিন্ন সময়ে প্রাইভেট পড়ানোর অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে করোনাকালে অবসর সময়ে ভিডিও বানাতে শুরু করেন। ভিডিওগুলো থেকে ইতিবাচক ফিডব্যাক পেতে থাকেন সুমিত। যাঁরা প্রোগ্রামিং শিখছেন, তাঁরা ভিডিওগুলো বেশ পছন্দ করেন এবং তাঁকে উৎসাহ দেন। ধীরে ধীরে চ্যানেলে ভিডিওর সংখ্যা বাড়তে থাকে।
২০২২ সাল পর্যন্ত ইউটিউবে ভিডিও আপলোড করেছেন। এরপর লার্ন উইদ সুমিত নামে একটি প্ল্যাটফর্ম প্রতিষ্ঠা করে সেখানে পেইড কোর্স বিক্রি শুরু করেন। প্রায় চার হাজার শিক্ষার্থী এই কোর্সের সুবিধা নিয়েছেন।
ইউটিউবে ৫০০ ভিডিও
লার্ন উইদ সুমিত ইউটিউব চ্যানেলে প্রায় ৫০০টি ভিডিও রয়েছে। এর সাবস্ক্রাইবার সংখ্যা ১ লাখ ৫ হাজার। ভিডিওগুলো প্রোগ্রামিং এবং আইটি সেক্টরে চাকরির কিংবা ভাইভার প্রস্তুতি বিষয়ে তৈরি করা।
ফ্রিতে ভিডিওগুলো দেখা যায়। সুমিতের ফ্রি কোর্স করে অনেক শিক্ষার্থী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ইন্টার্ন ও চাকরি করছেন। তবে প্রোগ্রামিংয়ের অ্যাডভান্সড লেভেলের কিছু শিখতে চাইলে পেইড কোর্স করতে হয়। সুমিত মূলত ওয়েব ডেভেলপমেন্ট নিয়ে কাজ করেন।
তাই ওয়েব ডেভেলপমেন্টের বিভিন্ন অনুষঙ্গ, যেমন এইচটিএমএল, সিএসএস, জাভাস্ক্রিপ্ট, বিভিন্ন ধরনের নোড জেএস, ফ্রেমওয়ার্ক ইত্যাদি শিখিয়ে থাকেন।
আছে ফেসবুক গ্রুপ
প্রোগ্রামিং যেহেতু একটু কঠিন, তাই ভিডিওতে যা বলা হয়, সেটা অনেকে না-ও বুঝতে পারেন। এসব সমস্যা দূর করতে সুমিত সাহা লার্ন উইদ সুমিত নামে একটি ফেসবুক গ্রুপ তৈরি করেছেন। এই গ্রুপে প্রায় ৭৫ হাজার সদস্য যুক্ত আছেন।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
লার্ন উইদ সুমিত প্ল্যাটফর্মটির মূল লক্ষ্য ছিল গ্রামগঞ্জ কিংবা মফস্বলের শিক্ষার্থীদের সহজে প্রোগ্রামিং শেখার সুযোগ তৈরি করা। সুমিত মনে করেন, গার্মেন্টস সেক্টরের বদলে আমাদের অর্থনীতির একটা বড় অংশ হবে তথ্যপ্রযুক্তি খাত। লার্ন উইথ সুমিত সেই পরিবর্তনে অংশ নিয়ে অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখতে চায়।
প্রোগ্রামিং শেখায় পরামর্শ
প্রোগ্রামিং শেখার জন্য পরিবারের ভূমিকাটা গুরুত্বপূর্ণ। এখন অভিভাবকেরা অনেক সচেতন বলে মনে করেন সুমিত। প্রোগ্রামিং শিখতে অনেক দামি বা হাই কনফিগারেশনের কম্পিউটার লাগে না। খুবই সাধারণ একটা কম্পিউটার; সেটা এমনকি পুরোনো হলেও চলবে।
এ রকম একটা জিনিস শিশুকে দিতে হবে। মোবাইল যেভাবে ব্যবহার করে ঠিক সেভাবেই কম্পিউটারের সামনে বসতে শিশুকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। তাদের লার্নিং কনটেন্ট দেখতে দেওয়ার পাশাপাশি রপ্ত করতে উদ্বুদ্ধ করতে হবে।
আমাদের কারিকুলামে ছোটদের জন্য কম্পিউটার শিক্ষা রয়েছে। সেগুলোকে একটু সিরিয়াসলি নিতে হবে। অভিভাবকদের উচিত, যারা শেখাতে পারে, তাদের সঙ্গে শিশুদের যোগাযোগ করিয়ে দেওয়া।
এ কাজগুলো করলে সে যখন উচ্চমাধ্যমিক পাস করবে, তখন একটা বেসিক কম্পিউটিং জ্ঞান চলে আসবে। তারপর যাদের মধ্যে লজিক্যাল বা অ্যানালাইটিক্যাল ক্ষমতা আছে, তারা প্রোগ্রামিং নিয়ে এগোতে পারবে।