অর্থভুবন ডেস্ক
একাধিক সূত্র বলেছে, পুলিশ ও প্রশাসনকে ‘ম্যানেজ’ করে চলছে এসব অবৈধ অটোরিকশা। তবে ট্রাফিক বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলছেন, মহাসড়কে যানজট নিরসনে শিগগির অবৈধ যানবাহনের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হবে।
হাটহাজারী বাসস্ট্যান্ড এলাকায় গত সোমবার সরেজমিনে দেখা গেছে, চট্টগ্রাম-রাঙামাটি-খাগড়াছড়ি মহাসড়কের হাটহাজারী বাসস্ট্যান্ড, কলেজ গেট ও হাটহাজারী বাজারের ত্রিবেণীর মোড়ে সকাল থেকে যানবাহনের দীর্ঘ সারি। স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী এবং কাজে বের হওয়া মানুষজন যানজটে আটকা পড়ে আছেন। এ সময় মহাসড়কের উভয় পাশে শত শত যানবাহনকে ২০-২৫ মিনিট দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। এই যানজটের পেছনে অবৈধ অটোরিকশাগুলোর বিশৃঙ্খল চলাচলকে দায়ী করছেন যাত্রীসাধারণ ও বিভিন্ন বাহনের চালকেরা।
তবে যানজটের এই চিত্র কেবল হাটহাজারী বাসস্ট্যান্ড এলাকাতেই নয়, এ ছাড়া মহাসড়কের কাটিরহাট, সরকারহাট, নতুন পাড়া, আমান বাজার, বড়দীঘির পাড়, চৌধুরী হাট, মদনহাট এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ নম্বর গেট এলাকায়ও প্রতিদিনই তীব্র যানজট লেগে থাকে। কিন্তু যানজট নিরসনে ট্রাফিক পুলিশ স্থায়ীভাবে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
সিএনজিচালিত অটোরিকশার একজন চালক (৫০) নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, মহাসড়কের হাটহাজারী বাসস্ট্যান্ড থেকে ভূমি অফিস এবং হাটহাজারী বাসস্ট্যান্ড থেকে কলেজ গেট হয়ে নাপিতের ঘাটা পর্যন্ত হাজারের বেশি অটোরিকশা চলাচল করে।
নম্বরপ্লেটবিহীন এসব অটোরিকশা থানা-পুলিশ ও প্রশাসনের চোখের সামনে দিয়েই চলাচল করে। এসব অটোর লাইসেন্স নেই। বেশির ভাগ চালকই অপ্রাপ্তবয়স্ক, নেই ড্রাইভিং লাইসেন্স। চালকেরা মধ্যস্বত্বভোগীদের মাধ্যমে ৭০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা পর্যন্ত সংশ্লিষ্টদের মাসোহারা দিয়ে অবৈধ এসব অটোরিকশা চালিয়ে যাচ্ছেন।
উপজেলার গড়দুয়ারা ইউনিয়নের বাসিন্দা শহিদুল ইসলাম বলেন, অটোরিকশাগুলোর বেশির ভাগ চালকের বয়স ১৬-২২ বছর। তাঁরা বেপরোয়াভাবে রাস্তায় অটো চালানোর কারণে প্রায়ই সময় দুর্ঘটনা ঘটে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের যথাযথ নজরদারির অভাবে মহাসড়কে অবৈধ এসব যানের দাপট বেড়েছে।
কামরুন্নাহার নামের এক গৃহিণী বলেন, প্রতিদিন মেয়েকে স্কুলে পৌঁছে দিতে হয় তাঁকে। অটোরিকশার এলোমেলো চলাচলের কারণে মহাসড়কে যাতায়াতের সময় রাস্তা পারাপারে ভয়ে থাকতে হয়। সম্প্রতি একটি বেপরোয়া গতির অটোরিকশা তাঁর মেয়েকে ধাক্কা দেয় বলে জানান তিনি।
এদিকে হাটহাজারী বাসস্ট্যান্ড থেকে ছেড়ে আসা রাউজান-রাঙ্গুনিয়াগামী সিএনজিচালিত অটোরিকশাগুলো কলেজ গেট এলাকায় ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের সামনে মহাসড়কের ওপর দাঁড় করিয়ে যাত্রী ওঠানো-নামানো হয়। এতে যানজট বেড়ে যায়।
হাটহাজারী ফায়ার সার্ভিসের সিনিয়র স্টেশন কর্মকর্তা শাহজাহান বলেন, বিষয়টি দীর্ঘদিন ধরে চললেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ অনেকটা উদাসীন। কোনো এলাকায় অগ্নিকাণ্ডের খবর পেলে যানজটের কারণে গাড়ি বের করতে হিমশিম খেতে হয়। অনেক সময় ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে দেরি হয়ে যায়, ফলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বেড়ে যায়।
এসব বিষয়ে কথা বলতে হাটহাজারীর ট্রাফিক ইন্সপেক্টর (টিআই) বখতিয়ার উদ্দিন শামীমের মোবাইল নম্বরে কল করা হলে তিনি ধরেননি। পরে কথা হয় চট্টগ্রামের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) এ এন এম ওয়াসিম ফিরোজের সঙ্গে। তিনি বলেন, মহাসড়কে চলাচলকারী অবৈধ যানবাহনের বিরুদ্ধে এরই মধ্যে বিভিন্ন উপজেলায় অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। শিগগির নম্বরপ্লেটবিহীন অটোরিকশার বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হবে।