ক্রিয়া ডেস্ক,অর্থভুবন
আন্দ্রেস ইনিয়েস্তা, লিওনেল মেসি কিংবা জাভি হার্নান্দেজ—নামী এই ফুটবলারদের প্রত্যেকেই কিন্তু ‘মেড ইন লা মাসিয়া’।
খেলোয়াড়দের নামগুলো যতখানি পরিচিত, অনেকের কাছে ‘লা মাসিয়া’ নামটা ততখানি পরিচিত না-ও ঠেকতে পারে। জানিয়ে রাখি, লা মাসিয়া হলো বিখ্যাত স্প্যানিশ ফুটবল ক্লাব বার্সেলোনার যুব একাডেমি। এই একাডেমি থেকে উঠে আসা বেশির ভাগ খেলোয়াড়ই পরে তুমুল জনপ্রিয়তা পেয়েছেন। তাই যাঁরা ফুটবল শিখতে চান, লা মাসিয়া তাঁদের কাছে হার্ভার্ড কিংবা অক্সফোর্ডের মতোই নামী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।
কারা পায় শেখার সুযোগ
বয়স ৬ হলেই যে কেউ লা মাসিয়ায় ভর্তির জন্য আবেদন করতে পারে। মূল কার্যক্রম স্পেনের বার্সেলোনায় হলেও পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ৩০টি একাডেমিতে কার্যক্রম পরিচালনা করে ক্লাবটি। প্রতিবছর হাজারো ফুটবলার থেকে প্রায় ২০০ জনকে আনুষ্ঠানিকভাবে একাডেমিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। তাঁদের মধ্যে মোট ৬০ তরুণ খেলোয়াড় লা মাসিয়ায় থাকার সুযোগ পান।
সংগত কারণেই এটি ইউরোপের অন্যতম ব্যয়বহুল ফুটবল একাডেমি। তবে একাডেমির পক্ষ থেকে দেওয়া হয় নানা রকম বৃত্তির সুযোগ। খেলোয়াড়ি দক্ষতা ও প্রতিভা বিবেচনায় কম বয়সেই মিলে যেতে পারে চুক্তির পারিশ্রমিক বা বেতন। এ ছাড়া বিভিন্ন ক্যাম্প আয়োজন করা হয় বার্সেলোনার পক্ষ থেকে। প্রায় ৪০টি দেশের খুদে ফুটবলাররা এসব ক্যাম্পে অংশ নেয়।
কেন এত জনপ্রিয়
একাডেমি চালু হওয়ার পর থেকেই প্রতিভাবান ফুটবলার উঠে এসেছেন এই একাডেমি থেকে। এর পেছনে বেশ কিছু কারণও রয়েছে। প্রথমত, বার্সা একাডেমি একটি মৌলিক দর্শনে বিশ্বাস করে, যেটিকে বলা হয় ‘বার্সেলোনা ডিএনএ’। এই ডিএনএর মূল ভিত্তি হলো—‘দীর্ঘ সময় নিজেদের দখলে বল রাখা, খেলোয়াড়ের নিজস্ব সৃজনশীলতা ও কৌশল দিয়ে বিপক্ষ দলের রক্ষণভাগে চিড় ধরানো এবং যথাসম্ভব নিশ্চিত হয়ে গোলপোস্টের জালে বল জড়ানোর চেষ্টা করা।’
একাডেমিকে আজকের পর্যায়ে আনতে অন্যতম কারিগর হিসেবে কাজ করেছেন বার্সেলোনার কিংবদন্তি ফুটবলার ও মাস্টারমাইন্ড জোহান ক্রুইফ।
লা মাসিয়া বিখ্যাত হওয়ার আরেকটি বড় কারণ হলো, এই একাডেমিতে অন্তর্ভুক্ত হলেই বার্সেলোনার মূল দলে খেলার একধরনের সম্ভাবনা তৈরি হয়। অন্য যেকোনো বড় ক্লাবের একাডেমির সঙ্গে বার্সা একাডেমির এটাই বড় পার্থক্য। ম্যানচেস্টার সিটি, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, রিয়েল মাদ্রিদ, চেলসিসহ বিশ্বের বড় ক্লাবগুলো মিলিয়ন ডলার খরচ করে প্রতি মৌসুমে তারকা ফুটবলারদের নিজের ডেরায় আনে। একাডেমির তরুণ খেলোয়াড়দের চেয়ে অন্য ক্লাবের প্রমাণিত এবং খ্যাতি পাওয়া খেলোয়াড়দের দিকেই বড় চোখে তাকিয়ে থাকে তারা। তবে বার্সেলোনা হাঁটে ভিন্ন পথে। দলের উল্লেখযোগ্যসংখ্যক খেলোয়াড়ই নিজেদের একাডেমি থেকে সুযোগ পান।
একটা বড় উদাহরণ পেশ করা যাক। ২০১২ সালের নভেম্বরে লা লিগায় লেভান্তের বিপক্ষে ম্যাচে ৪-০ ব্যবধানে বড় জয় পায় বার্সেলোনা। এ ম্যাচে বার্সার দলের সব খেলোয়াড়ই উঠে এসেছিলেন এই একাডেমি থেকে।
বিখ্যাত লা মাসিয়া গ্র্যাজুয়েট
লা মাসিয়ার ‘প্রোডাক্ট’ হিসেবে পরিচিত সবচেয়ে বড় নাম লিওনেল মেসি। ১৩ বছর বয়সে তিনি বার্সা একাডেমিতে যোগ দেন। এরপর ১৭ বছর বয়সে সুযোগ পান বার্সেলোনার মূল দলে। পরের ইতিহাস তো সবার জানা। মেসির সতীর্থ জাভি হার্নান্দেজ ও আন্দ্রেস ইনিয়েস্তা জুটির কথাও ফুটবলভক্তরা নিশ্চয়ই মনে রাখবেন। মধ্যমাঠের এই দুই লড়াকু যোদ্ধা কত জাদু দেখিয়েছেন, কত যে মনে রাখার মতো মুহূর্ত উপহার দিয়েছেন! পেপ গার্দিওলার অধীন বার্সেলোনার দুরন্ত পথচলার সময়েও অধিকাংশ খেলোয়াড়ই ছিলেন লা মাসিয়ার। সে সময়ের কার্লোস পুয়োল, জেরার্ড পিকে, সার্জিও বুসকেটস, পেড্রো রদ্রিগেজ, ভিক্টর ভালডেসের মতো খেলোয়াড়ও শৈশব কাটিয়েছেন এই একাডেমিতে।
আরও একটা তথ্য জানিয়ে শেষ করি। ২০১০ সালে স্পেন প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের সোনালি ট্রফি অর্জন করে। ওই বিশ্বকাপের ফাইনালে স্পেনের একাদশের সাতজনই ছিলেন বার্সেলোনার খেলোয়াড়। তাঁদের মধ্যে ছয়জনই লা মাসিয়া গ্র্যাজুয়েট!