অর্থভুবন প্রতিবেদক
গ্রামবাংলায় একটা কথা চালু ছিল। ‘যদি বাঁচতে চাও, যত পারো সবজি আর ফল খাও’। আসলে রোজ একজন মানুষ কতটুকু ফল খাবে তা লিঙ্গ, বয়স ও কাজের ধরনের ওপর নির্ভর করে। যারা দৈহিক পরিশ্রম কম করেন, তাদের জন্য ফল খাওয়ার পরিমাণ এক রকম, যারা বেশি করেন তাদের জন্য ফল খাওয়ার পরিমাণ আরেক রকম।
দেহ সুস্থ-সবল রাখতে যেসব পুষ্টি উপাদানের দরকার, তার প্রায় সবই ফলে রয়েছে। গর্ভবতী ও প্রসূতি মায়ের স্বাস্থ্যরক্ষায় ও স্বাস্থ্য পুনরুদ্ধারে ফল অদ্বিতীয়। মানুষের শরীরের জন্য যথেষ্ট পরিমাণে ফলেট বা ফলিক এসিড দরকার। প্রতিদিন ফল খেলে স্ট্রোক, হৃদরোগ ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমে। আবার কিছু ফল ক্যানসারের ঝুঁকি কমায়। পুষ্টিবিদদের মতে, একজন পূর্ণবয়স্ক লোকের রোজ কমপক্ষে ২০০ গ্রাম ফল খাওয়া উচিত। তার মানে, পাঁচজনের একটি পরিবারে রোজ ১ কেজি ফল লাগবে। তাহলে প্রায় ১৬ কোটি মানুষের জন্য মোট কত টন ফলের প্রয়োজন?
দেশ রূপান্তরে বুধবার প্রকাশিত ‘কেজি থেকে গ্রামে নেমেছে ফল’ শিরোনামের সংবাদের মাধ্যমে জানা যাচ্ছে বাজারে আমদানি করা ফল চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে। দেশি ফলের দামও চড়া। ক্রমাগত মূল্যবৃদ্ধির কারণে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো ফল কেনার সামর্থ্য হারিয়েছে। মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো এখনো আপেল-কমলার মতো বিলাসী ফল কিনলেও পরিমাণ কমিয়েছে। অনেকে ১৫০-২৫০ গ্রাম আঙুর, দুটি আপেল, ২০০ গ্রাম মালটা, একটি বেদানা ও দুটি করে কমলা কিনছে। তাতেই কি শরীরের পুষ্টি চাহিদা পূরণ হবে!
প্রায় শতকরা ৬০ ভাগ ফল উৎপাদিত হয় গ্রীষ্ম ও বর্ষা ঋতুতে। ফলের প্রধান উৎপাদন মাস হলো জ্যৈষ্ঠ ও আষাঢ় মাস। বেশি উৎপাদনের কারণে তখন ফলের প্রাপ্যতা বেড়ে যায়। মানুষ কম দামে বেশি ফল কিনতে পারে। এজন্য খুশি থাকে। কিন্তু উৎপাদনকারী চাষিদের মনে সুখ কম থাকে কম দামের কারণে। এ দুই মাস বেশি ফল খেতে পারলেও বাকি দশ মাসে ফল উৎপাদন কমে যায়। অবশ্য কলা ও পেঁপে বারো মাসই উৎপাদিত হচ্ছে। তারপরও ফলের বাজার অস্থিরতার কারণ হচ্ছে, আমদানি নির্ভরতা। অনেক ধরনের ফলই বিদেশ থেকে নিয়ে আসতে হয়।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের জনস্বাস্থ্য ও তথ্যবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. তাজউদ্দিন সিকদার বলেন, ‘আমরা মানুষকে ফ্যাট জাতীয় খাবার এড়াতে বলি। কিন্তু ফল এমন একটি পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ খাদ্য, যা মানবদেহের জন্য উপকারী। ফল খুবই দরকার। একেকটি ফল একেক রকম। লেবু এক রকম, আনারস আরেক রকম। রোগপ্রতিরোধক হিসেবে এগুলো কাজ করে। যদি না খাওয়া হয় তাহলে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতায় ঘাটতি দেখা দেবে। এগুলো বাংলাদেশের প্রায় সব জায়গাতেই আছে। আমরা যে পরিবার থেকে উঠে এসেছি, সেই ধরনের পরিবারে মাসে পেয়ারা ছাড়া একটু আপেল খাওয়া হতো। এখন অবস্থার পরির্বতন হয়েছে। মানুষের আর্থিক সংগতিও বেড়েছে, কিন্তু সংগতির সঙ্গে যদি ফলগুলোর দামের সামঞ্জস্য থাকত তাহলে মানুষ স্বাস্থ্যগত প্রটেকশন পেত।’
সাধারণ মানুষের জীবন এমনিতেই দ্রব্যমূল্যের কশাঘাতে ওষ্ঠাগত। তার ওপর ফলের বাজারের চিত্রও যদি এমন হয়, তাহলে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দায়িত্বহীনতাই স্পষ্ট হয়ে উঠবে। একইসঙ্গে যে সমস্ত বিদেশি ফলে দেশি ফলেরই ভিটামিন পাওয়া যায়, সেই সমস্ত দেশি ফলের উৎপাদন বাড়ানো দরকার। সেক্ষেত্রে কৃষিবিদদের এগিয়ে আসতে হবে। কীভাবে দেশি ফলের উৎপাদন বাড়িয়ে জনগণের চাহিদা পূরণ করা যায়, শরীরে ভিটামিনের ঘাটতি পূরণ করা যায় সে ব্যাপারে উদ্যোগী হওয়া প্রয়োজন। সতর্ক থাকতে হবে, সেখানেও যেন কালোবাজারির থাবা না বসে? এখন তো ফল বিক্রি হচ্ছে গ্রামে, পরবর্তী সময়ে না আবার ফল পিস পিস করে বিক্রি শুরু হয়!