অর্থভুবন ডেস্ক
২০২০ সাল। অভাব অনটনের পরিবারে স্বস্তি ফিরিয়ে আনতে কিনে আনলেন ৩০টি হাঁস। খামারের অভিজ্ঞতা না থাকলেও ধীরে ধীরে স্থানীয় প্রাণিসম্পদ বিভাগের নানা প্রশিক্ষণের মধ্য দিয়ে নিজেকে ঝালিয়ে নিলেন। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে অভিজ্ঞতা। এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে হাঁসের সংখ্যাও।
মাত্র ৩০টি হাঁস দিয়ে শুরু করা পারিবারিক খামারে এখন হাঁসের সংখ্যা ১ হাজার ৬০০। পাশাপাশি তিনি নিজ বাড়িতেই স্থাপন করেছেন একটি মিনি হ্যাচারি। এ হ্যাচারিতে ডিম থেকে হাঁসের বাচ্চাও উৎপাদন করছেন তিনি। এসব হাঁসের বাচ্চা সরবরাহ করছেন জয়পুরহাটসহ আশপাশের বিভিন্ন জেলায়।
গল্পটি জয়পুরহাটে খামারি রেহেনা বেগমের। এ খামার থেকেই স্বাবলম্বী হয়েছেন তিনি। পরিবারকে করেছেন সচ্ছল। জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার মাত্রাই ইউনিয়নের শাইলগুন গ্রামের সাহসী এই নারী হাঁসের খামার করে হয়েছেন নন্দিত।
কালাই উপজেলার মাত্রাই শালগুইন গ্রামের আজিজার রহমান ও আছিয়া বেগমের তৃতীয় সন্তান মোছা. রেহেনা বেগম। বাবার সামর্থ্য না থাকায় লেখাপড়া তেমন করা হয়নি তার। কিশোরীবেলার উচ্ছলতায় এলো ঝড়। মাত্র ১৫ বছর বয়সে একই গ্রামের রেহেনার চেয়ে ১০ বছরের বড় ইউসুফ আলী ম-লের সঙ্গে বিয়ে হয়। বর ইউসুফ সহজ সরল হওয়ায় পৈতৃক সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত হন। কিশোরী রেহেনা অপরিপক্ব বয়সের ঘোর লাগা চোখে চেয়ে দেখলেন ঘোর দুর্যোগ। এ অবস্থা সামাল দেবেন কীভাবে বুঝে উঠতেই বেগ পেতে হয় তাকে। এরপরও দমে যাননি রেহেনা। তখন থেকেই হাঁস ও মুরগি পালন করে সংসার চালিয়েছেন। এরই মধ্যে এক ছেলে ও এক মেয়ে সন্তানের মা হয়েছেন তিনি। বর্তমানে ছেলে ও স্বামী মিলে রেহেনার হাঁসের হ্যাচারি দেখাশোনা করেন।
নিজের ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে খামারি রেহেনা বেগম বলেন, আমার পরিবারের আর্থিক অবস্থা তেমন ভালো ছিল না। সে জন্য নিজের সচ্ছলতা বাড়ানোর জন্য ৩০টি হাঁস কিনে পালন শুরু করি। এরপর হাঁস ও ডিম বিক্রি করে লাভ হওয়ায় হাঁসের সংখ্যা আরও বাড়াতে থাকি। এখন আমার খামারে ১ হাজার ৬০০ হাঁস রয়েছে। এর মধ্যে শতাধিক হাঁস প্রতিদিন ডিম দেয়। সেই ডিম তিন দিন পরপর বিক্রি করি।
অদম্য রেহেনার সহায়তায় এগিয়ে এসেছে স্থানীয় একটি এনজিও। তাদের কারিগরি সহায়তায় বাড়িতে একটি মিনি হ্যাচারি স্থাপন করেছেন রেহেনা। হ্যাচারির নাম দিয়েছেন ‘মেসার্স রেহেনা হ্যাচারি’। এরপর তাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। খামারে উৎপাদিত ডিম থেকে নিয়মিত এই হ্যাচারিতে বাচ্চা উৎপাদন হচ্ছে। বিভিন্ন এলাকার মানুষ এসে কিনে নিয়ে যাচ্ছে ডিম ও বাচ্চা।
রেহেনার এই খামারের বর্তমান খরচ ৩ লাখ টাকা। সব মিলিয়ে প্রায় ৮ লাখ টাকার বিনিয়োগ আছে তার। এ ছাড়া প্রতি মাসে ডিম ও বাচ্চা বিক্রি করেই ৩০-৪০ হাজার টাকা আয় হয় রেহেনার।
গ্রামবাসী চান্দা আক্তার বলেন, রেহেনা বেগমের খামার দেখে খুব ভালো লাগছে। আমারও ইচ্ছা আছে এ রকম খামার করার। মোশারফ হোসেন নামের আরেক গ্রামবাসী বলেন, একজন নারী খামারি হয়ে এতটা সফল হয়েছে। এটা আমাদের সবার জন্যই গর্বের। সরকারি সহযোগিতা পেলে আমরাও হাঁসের খামার করব।
এ বিষয়ে জয়পুরহাট ভারপ্রাপ্ত প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. এস. এম. খুরশিদ আলম বলেন, রেহেনা বেগম একজন সফল খামারি। আমরা তাকে প্রশিক্ষণ দিয়েছি। এ ছাড়া যারা এ রকম খামার করছেন তাদের জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগের পক্ষ থেকে নিয়মিত প্রশিক্ষণসহ সব ধরনের সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে।