কৃষি গবেষণা ফাউন্ডেশনের আর্থিক সহায়তায় ২০১৭ থেকে ২০২৫ সাল মেয়াদে ‘ডেভেলপমেন্ট অব উপজেলা ল্যান্ড সুইটেবিলিটি অ্যাসেসমেন্ট অ্যান্ড ক্রপ জোনিং সিস্টেম অব বাংলাদেশ’ নামক একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল, যার উপজাত হিসাবে ‘খামারি’ অ্যাপটি তৈরি হয়েছে। এ অ্যাপে আধুনিক ক্রপ জোনিং প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে। ক্রপ জোনিংয়ে মূলত এলাকাভিত্তিক মাটির বৈশিষ্ট্য, আবহাওয়া-জলবায়ু ও ফসলের অর্থনৈতিক দিক সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। এসব তথ্য দিয়ে কোন জমি কোন মৌসুমে কোন ফসলের জন্য উপযোগী এবং এলাকাভিত্তিক কোন ফসল অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক তা চিহ্নিত করা যায়। এছাড়াও খামারি অ্যাপে আধুনিক জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সিস্টেম (জিআইএস), রিমোট সেন্সিং প্রযুক্তি এবং উঁচু-নিচু জমির ক্ষেত্রে শাটল রাডার টপোগ্রাফি মিশনের (এসআরটিএম) তথ্য-উপাত্ত ব্যবহার করা হয়েছে। কৃষকদের সুবিধার্থে এটি সম্পূর্ণ বাংলায় তৈরি করা হয়েছে। অ্যাপটিতে প্রবেশ করলেই ফসল উপযোগিতা, সার সুপারিশ, ফসল জোন, শস্য বিন্যাস, সংরক্ষিত তথ্য ও মাটির গুণাগুণ নামক ভিন্ন ভিন্ন মেন্যুবার পাওয়া যায়। প্রতিটি মেন্যুতে রয়েছে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে যাবতীয় তথ্য।
অ্যাপটিতে দেশের ৩৬০টি উপজেলার ৭৬টি ফসলের ক্রপ জোনিং পাওয়া যায়। অ্যাপটি বর্তমানে গুগল প্লে স্টোরে পাওয়া যাচ্ছে এবং ডাউনলোড হয়েছে এ পর্যন্ত ১০ হাজার বার। প্রতিটি উপজেলায় সহকারী কৃষি কর্মকর্তা, কৃষক প্রতিনিধি ও সার ব্যবসায়ীদের নিয়ে ৪০ জনের দল গঠন করে অ্যাপটির ওপর প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।
বাংলাদেশের মতো কৃষিপ্রধান দেশে খামারি অ্যাপের উদ্ভাবন নিঃসন্দেহে একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ। অ্যাপটি ব্যবহার করে অন্যান্য ফসলের পাশাপাশি পাট চাষ করে উপকৃত হতে পারেন কৃষকরা। অ্যাপটিতে পাটের বিভিন্ন জাত, এগুলোর সার সুপারিশ, সার প্রয়োগ পদ্ধতি ও মুনাফার হার সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যায়। পাটচাষিরা এটি ব্যবহারের মাধ্যমে পরিমিত সার প্রয়োগ করে সর্বোচ্চ ফলন পেতে পারেন। পাট উৎপাদনপ্রবণ ৪৬টি জেলায় উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি অবশিষ্ট জেলাগুলোতেও পাট চাষ সম্প্রসারণে ‘খামারি’ অ্যাপ কৃষক ও গবেষকদের জন্য সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে।
আবদুল্লাহ-আল-বাক্কী : বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট
abdullahalbakky.1993@gmail.com