অর্থভুবন ডেস্ক
ব্যাংকিং সেবা নিতে গিয়ে হয়রানির শিকার হন অনেকে। বিশেষ করে রেমিট্যান্সের টাকা পেতে দেরি, কাগজপত্র ঠিক থাকার পরও ঋণের জন্য মাসের পর মাস ঘোরাঘুরি, আমানতের বিপরীতে চুক্তিমতো সুদ না পাওয়ার অনেক ঘটনা রয়েছে। এসব বিষয়ে প্রতিকার চেয়ে ব্যাংক ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকে জানানোর সুযোগ রয়েছে। আবার আপনার সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত নয় এমন বিষয় যেমন– অন্য কেউ ব্যাংকিং লেনদেনে মানি লন্ডারিং বা অন্য কোনো আর্থিক অপরাধে জড়াচ্ছেন কিনা ইত্যাদি ক্ষেত্রেও আপনার তথ্য জানার সুযোগ রয়েছে। এ ধরনের অপরাধমূলক লেনদেনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটে (বিএফআইইউ) অভিযোগ করতে হবে।
ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে সেবা পেতে হয়রানির শিকার হলে আপনি সরাসরি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ১৬২৩৬ এই হটলাইনে টেলিফোন করে জানাতে পারেন। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে জানানোর আগে ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্ট শাখা ব্যবস্থাপকের কাছে মৌখিক অথবা লিখিতভাবে জানাতে পারেন। প্রতিকার না পেলে ব্যাংকের প্রধান বা আঞ্চলিক কার্যালয়ে অভিযোগ করতে পারেন। সেখানেও সমস্যা নিষ্পত্তি বা কাঙ্ক্ষিত প্রতিকার না পেলে বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘গ্রাহক স্বার্থ সংরক্ষণ কেন্দ্রে’ অভিযোগ করতে হবে।
সেবাসংশ্লিষ্ট অভিযোগপত্রে আপনাকে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নাম, শাখা, অভিযোগের বিস্তারিত বিবরণ দিতে হবে। অভিযোগকারীর নাম, ঠিকানা ও ফোন নম্বর এবং অন্যান্য প্রমাণ সংযুক্ত করতে হবে। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকে টেলিফোনে অভিযোগের ক্ষেত্রে সরকারি ছুটির দিন ছাড়া সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৬টার মধ্যে জানাতে হবে। কেউ চাইলে bb.cipc@bb.org.bd এই ই-মেইলে অভিযোগ করতে পারেন। আবার বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইট, মোবাইল অ্যাপ কিংবা সরাসরি অভিযোগ করা যায়। অভিযোগের জন্য BB Complaints মোবাইল অ্যাপ গুগল প্লে-স্টোরে রয়েছে। ওয়েবসাইটে অভিযোগ জানানোর জন্য আপনাকে bb.org.bd এই ঠিকানায় ঢুকতে হবে। ওয়েবপেজে গিয়ে সার্ভিসেসের ঘরে কাস্টমার কমপ্লেইনে ক্লিক করতে হবে। সেখানে বিভিন্ন তথ্য চাওয়া হবে। তথ্য পূরণ করে সব শেষ সাবমিট বাটনে চাপ দিতে হবে। প্রতিটি অভিযোগ দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য নির্দেশনা রয়েছে। যদিও অভিযোগ নিষ্পত্তিতে দীর্ঘসূত্রতার অনেক ঘটনা শোনা যায়।
লিখিত অভিযোগ কার বরাবর করতে হবে– এ নিয়ে অনেকেই বুঝতে পারেন না। ডাকযোগে বা সরাসরি গিয়ে অভিযোগ দেওয়ার ক্ষেত্রে পরিচালক, ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটি অ্যান্ড কাস্টমার সার্ভিসেস ডিপার্টমেন্ট, বাংলাদেশ ব্যাংক, প্রধান কার্যালয়, মতিঝিল বা/এ, ঢাকা-১০০০ এই ঠিকানায় দিতে হবে। এর নিচে বিষয় এবং বিস্তারিত বিবরণ দিতে হবে। সশরীরে অভিযোগ জমার ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ৩২ তলা ভবনে দ্বিতীয় তলায় অভিযোগ জমা দেওয়া যায়।
অভিযোগ করলেই কি প্রতিকার পাওয়া যায় : বিভিন্ন সমিতি, এনজিও, এমএলএমসহ নানা জায়গায় টাকা রেখে ধরা খেয়েও অনেকে অভিযোগ করেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকে। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক শুধু তাদের নিয়ন্ত্রণে থাকা ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও এমএফএসের অভিযোগ নিষ্পত্তি করতে পারে। কোনো তথ্য-প্রমাণ ও হিসাবধারীর অনুমতি ছাড়া তৃতীয় পক্ষ অভিযোগ করলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক তা নিয়ে কাজ করে না। আবার আদালতে বিচারাধীন বিষয়ে অভিযোগের প্রতিকার করতে পারে না কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণে থাকা বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটকে (বিএফআইইউ) অনেক ক্ষমতা দেওয়া আছে। যে কোনো ধরনের আর্থিক সংশ্লিষ্টতায় কোনো অপরাধ হলে এ ক্ষেত্রে ব্যবস্থা নিতে পারে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কেননা ব্যাংক, এমএফএ, বীমা, শেয়ারবাজারসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান, স্বর্ণের দোকানসহ সব ধরনের আর্থিক লেনদেনকারী প্রতিষ্ঠান বিএফআইইউর রিপোর্ট প্রদানকারী সংস্থা। বিএফআইইউতে অভিযোগ করতে আপনাকে bfiu.org.bd এই ওয়েব ঠিকানায় যেতে হবে। ওয়েবপেজে গিয়ে লোডজ কমপ্লেইন্টের ওপর ক্লিক করলে একটি পেজ আসবে। অভিযোগ করার ক্ষেত্রে আপনি নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কিনা জানাতে হবে। অনিচ্ছুক না হলে নাম, ঠিকানাসহ বিস্তারিত বর্ণনা দিয়ে অভিযোগ দিতে পারবেন। সরাসরি বা ডাকযোগে হেড অব বিএফআইইউ বরাবর অভিযোগ জানাতে পারবেন। আইনগতভাবে বিএফআইইউ আলাদা সংস্থা হলেও এখনও এর পুরো কার্যক্রম পরিচালিত হয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তাদের মাধ্যমে। সংস্থাটির অফিস মতিঝিলে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে।