অর্থভুবন প্রতিবেদক
অনেক আলোচনার পর আগামী নির্বাচনে পর্যবেক্ষণ দল না পাঠানোর সিদ্ধান্ত জানিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। ঢাকা সফর করে যাওয়া ইইউর প্রাক-নির্বাচন পর্যবেক্ষক দলের সুপারিশের ভিত্তিতে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতিবিষয়ক প্রধান (হাই রিপ্রেজেনটেটিভ) জোসেপ বোরেলের নেওয়া এই সিদ্ধান্তের কথা গত বুধবার নির্বাচন কমিশনকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছে। চিঠিতে বলা হয়েছে, নির্বাচন পর্যবেক্ষণে ২০২৩-২৪ সালের জন্য ইইউর বরাদ্দ বাজেটের স্বল্পতার কারণে বাংলাদেশের আগামী জাতীয় নির্বাচনে পূর্ণাঙ্গ পর্যবেক্ষক দল না পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন জোসেপ বোরেল।
এ বিষয়ে গতকাল নির্বাচন কমিশন সচিব মো. জাহাংগীর আলম জানিয়েছেন, আগামী নির্বাচন পর্যবেক্ষণে পূর্ণাঙ্গ পর্যবেক্ষক দল না পাঠানোর সিদ্ধান্ত জানিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। এর কারণ হিসেবে ‘বাজেট স্বল্পতার’ কথা বলা হয়েছে তাদের ইমেইলে। গতকাল নির্বাচন ভবনে নিজের দফতরে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ইউরোপীয় ইউনিয়নের হেড অব ডেলিগেশন ওই ইমেইল নির্বাচন কমিশনে পাঠিয়েছেন। আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যবেক্ষণে প্রতিনিধি পাঠাবে কি না, সেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে ভোটের পরিবেশ দেখতে গত জুলাই মাসে একটি অনুসন্ধানী মিশন পাঠিয়েছিল ইউরোপীয় ইউনিয়ন। তারা তাদের মূল্যায়ন প্রতিবেদনের ভিত্তিতেই পূর্ণাঙ্গ দল না পাঠানোর এই সিদ্ধান্ত জানানো হলো। জাহাংগীর আলম বলেন, “জুলাই মাসে তারা বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন, সেটা ফলপ্রসূ হওয়ায় সবাইকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেছেন। ওই মেইলে তিনি আরও জানিয়েছেন, তাদের হেড অফিস সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন, ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে তাদের পূর্ণাঙ্গ একটি মিশন নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য পাঠানোর আর্থিক বিষয় ছিল, বাজেট স্বল্পতার কারণে না মঞ্জুর করেছেন বা আপাতত না পাঠানোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন। তারা ধন্যবাদ জানিয়ে আরও বলেছেন, সিইসির সঙ্গে তাদের যোগাযোগ অব্যাহত থাকবে। তারা পূর্ণাঙ্গ দল না পাঠানোর বিষয় বলেছেন। এখানে পূর্ণাঙ্গ দলের কথা বলা হয়েছে।
একটি গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের নির্বাচনের পরিবেশ পর্যবেক্ষণের জন্য ‘অনুকূল নয়’ বলে মনে করেছে ইইউর অনুসন্ধানী মিশন, সে কারণে তারা পর্যবেক্ষক ‘পাঠাবে না’।
নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে ইইউর চিঠিতে কী বলা হয়েছে প্রশ্ন করলে ইসি সচিব বলেন, এই মেইলে এ ধরনের কিছুর উল্লেখ ছিল না। এ চিঠির ভাষায় এ ধরনের কথা নেই। পূর্ণাঙ্গ দল আসছে না, তা সিইসিকে অবহিত করা হয়েছে শুধু।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের পূর্ণাঙ্গ দল না পাঠানোর সিদ্ধান্ত ভোটকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে ইসি সচিব বলেন, এটা সিইসি মহোদায় ভালো বলতে পারবেন। আর তারা পূর্ণাঙ্গ কথাটি বলেছেন। কাজেই ছোট দল পাঠাবেন, নাকি এই দেশে যারা আছেন তারাই (পর্যবেক্ষণ) করবেন… কেননা, তারা যোগাযোগ অব্যাহত রাখার কথা বলেছেন। সিইসি মহোদয় আমাকে তাদের মেইলের বিষয়টি জানাতে বলেছেন। আমি সেটুকুই জানি।
অক্টোবরে আসছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক–নির্বাচন পর্যবেক্ষক দল : বাংলাদেশের নির্বাচন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে এবার ঢাকায় আসছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক-নির্বাচন পর্যবেক্ষক প্রতিনিধিদল। দলটি ৭-১৩ অক্টোবর বাংলাদেশ সফর করবে। গতকাল ঢাকার মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার এ তথ্য জানিয়েছেন।
ব্রায়ান শিলার জানান, যুক্তরাষ্ট্রের অর্থায়নে পরিচালিত ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউট (আইআরআই) ও ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ইনস্টিটিউট (এনডিআই) আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের জন্য এনডিআইয়ের নীতিমালার ঘোষণা অনুযায়ী স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে একটি যৌথ প্রাক-নির্বাচন মূল্যায়ন মিশন (পিইএএম) পরিচালনা করবে। প্রতিনিধিদলটি ৭-১৩ অক্টোবর বাংলাদেশ সফর করবে। এতে ছয়জন প্রতিনিধি ও সহায়তাকর্মী থাকবেন। তিনি জানান, প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন, সরকারি সংস্থা, রাজনৈতিক দল, নাগরিক পর্যবেক্ষক, নারী ও যুব গোষ্ঠীসহ সুশীল সমাজ সংস্থা, বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক মিডিয়া সংস্থা এবং বিদেশি কূটনৈতিক মিশনের সঙ্গে দেখা করবে। সফর শেষে প্রতিনিধিদল একটি বিবৃতি দেবে, যেখানে ইতিবাচক প্রবণতা এবং সেইসঙ্গে উদ্বেগের ক্ষেত্রগুলো তুলে ধরা হবে এবং সুপারিশগুলো দেওয়া হবে। পিইএএমের প্রাথমিক কাজ হলো নির্বাচনের প্রস্তুতি এবং নির্বাচনী প্রেক্ষাপটে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তথ্য দেওয়া। নির্বাচনের দিনের জন্য সীমিত আন্তর্জাতিক নির্বাচন পর্যবেক্ষণ মিশন পাঠাবে কি না, তা-ও এটি নির্ধারণ করবে।
গত ৮-২৩ জুলাই ঢাকা সফর করে ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রাক-নির্বাচন পর্যবেক্ষক প্রতিনিধিদল।