ত্বকে আঁশযুক্ত চিড় চিড় ফাটা দাগের সমস্যাকে বলা হয় ইকথায়োসিস। হাজারে দু–একজনের এই রোগ দেখা যায়। অতিরিক্ত ঠান্ডায় এই সমস্যা বৃদ্ধি পায়। নানা ব্যাকটেরিয়ার সংস্পর্শে বা সংক্রমণে এই রোগের তীব্রতা বাড়ে। ইকথায়োসিস ভালগ্যারিস জেনেটিক্যাল ত্বকের রোগ। শিশু জন্মের পরপরই এটি দেখা গেলেও কয়েক সপ্তাহের মধ্যে চলে যায়। পরে বয়স পাঁচ থেকে সাত বছর হলে আবার দেখা যায়। নারী-পুরুষ যে কেউ এই রোগে আক্রান্ত হতে পারেন।
আক্রান্ত রোগীদের শরীরের ত্বক খুব শুষ্ক থাকে। আঁশযুক্ত চামড়া দেখা যায়, বিশেষ করে পেটের নিচের দিকে, হাত ও শরীরের মাঝখানে। নারীদের নাভির নিচে বা নিতম্ব ও কোমরের পেছন দিকে ফাটা দাগ বেশি দেখা যায়। কারও কারও শরীরের অনেক জায়গাজুড়ে দেখা যায়।
আক্রান্ত স্থান মাছের শরীরের মতো, লম্বা দাগ ও চিরল ও সূক্ষ্ম লাইনের মতো মনে হয়। এ কারণে চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা একে ‘ফিস স্কেল’ রোগও বলে থাকেন। ত্বকে হালকা চুলকানি হয়। মাথায় খুশকি বা উকুন হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
অতিরিক্ত ঠান্ডায় চিড় বা লম্বা দাগে ফাটল দেখা দিতে পারে। এ ধরনের জিনবাহী ব্যক্তিদের ডায়াবেটিস হওয়ার শঙ্কা থাকে। আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যবয়সে শ্রবণ বা চোখের সমস্যা হয়। খুশকির কারণে কানের ভেতর খইল বেশি হয়। তা ছাড়া স্বাভাবিকের চেয়ে একটু বেশি লোমকূপ থাকে। এতে দেহের স্বাভাবিক তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ প্রভাবিত হতে পারে বা কারও কারও শরীরে ঘাম কম দেখা যায়। ৭০ শতাংশ রোগী অ্যালার্জির সমস্যায় ভোগেন। রোগটি বংশগত, তাই এটি সংক্রামক নয়।
চুলকানি হলেও নখ দিয়ে চুলকানো যাবে না। এতে সংক্রমণ হয়ে আশপাশের টিস্যু ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে সমস্যা বাড়তে পারে। ইলেকট্রো মাইক্রোস্কপিক অ্যানালাইসিস করে চিকিৎসক রোগ নির্ণয় করতে পারেন।
যেভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায়
এই রোগ কখনোই পুরোপুরি ভালো হয় না। জিনগত অস্বাভাবিকতা, তাই তেমন কোনো চিকিৎসা নেই। তবে আধুনিক লেজার স্কিংরাফি করলে (প্লাস্টিক সার্জারির একটি পদ্ধতি) চামড়ার দাগ অনেকটা সেরে যায়। এ ছাড়া গোসলের পর ময়েশ্চারাইজিং লোশন অথবা পানির সঙ্গে গ্লিসারিনযুক্ত তেল বা পেট্রোলিয়াম জেলি–জাতীয় ক্রিম ব্যবহার করলে সমস্যা অনেকটা কম থাকে।
প্রতিদিন গরম পানি দিয়ে ধোয়া পরিষ্কার কাপড় পরতে হবে। ভেজা বা সাবান দিয়ে ধোয়া কাপড় বা সাবানের পাউডার লেগে আছে, এমন কাপড় পরা বাদ দিতে হবে। চর্মরোগ বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিতে হবে।
-
ডা. এস এম রাসেল ফারুক, সহকারী অধ্যাপক, চর্ম ও যৌনরোগ–বিশেষজ্ঞ, আইচি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ঢাকা