Friday, January 17, 2025

স্ব স্ব জায়গায় থেকে হলেও শিশুর সামাজিকীকরণে আমাদের ভূমিকা অপরিহার্য 

অর্থভুবন ডেস্ক

বিভিন্ন পর্যালোচনা থেকে দেখা গেছে, যেসব শিশু যত্ন আর চারপাশের লোকজনের আদর-ভালোবাসায় বড় হয় সেসব শিশু অন্যদের সঙ্গে সহজে মিশতে পারে, তাদের মাঝে বিশ্বস্ততার সৃষ্টি হয় এবং অপরের সঙ্গে একটি মধুর সম্পর্ক গড়ে ওঠে।  পক্ষান্তরে যেসব শিশু আদর-যত্ন থেকে বঞ্চিত হয় তাদের মধ্যে হিংসা, আক্রমণাত্মক, নেতিবাচক, ঝগড়াটে, অসহযোগিতার মনোভাব সৃষ্টি হয়। বিভিন্ন তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, শিশুর সামাজিকীকরণে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের প্রভাব পড়ে। প্রথমেই বলা যায়, পরিবারের ভূমিকা। শিশুদের মাঝে যে গুণাবলি গড়ে ওঠে তার অধিকাংশই শিশু বাবা-মায়ের কাছ থেকে পেয়ে থাকে। একই সঙ্গে শিশুদের ছোটখাটো ত্রুটিগুলো গড়ে ওঠার পেছনেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে তাদের পরিবারের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ প্রভাব থাকে। শিশুরা যেহেতু তাদের মায়েদের সঙ্গে তুলনামূলকভাবে বেশি সময় কাটায়, তাই তারা মায়ের দিক থেকেই বেশি প্রভাবিত হয়। পরিবারের মধ্যেই শিশুর সামাজিক নীতিবোধ, নাগরিক চেতনা, সহযোগিতা, সম্প্রীতি, ভ্রাতৃত্ববোধ, আত্মত্যাগ ও ভালোবাসা জন্মে। পারিবারিক বিশৃঙ্খলা, পিতা-মাতার বিচ্ছেদ, ভিন্ন গৃহে বসবাস, পিতা কিংবা মাতা অথবা পিতা-মাতা উভয়ের মৃত্যু শিশুর সুষ্ঠু সামাজিকীকরণে বাধার সৃষ্টি করে। এসব পরিবারে শিশুর সুষ্ঠু সামাজিকীকরণ হয় না। এসব শিশুর আচরণে একাকিত্ববোধ, প্রতিহিংসা, আত্মকেন্দ্রিক মনোভাব প্রভৃতি দেখা দিতে পারে।

অনেক সময় দেখা যায়, পিতার অত্যধিক শাসন কিংবা মায়ের অধিক স্নেহ শিশুর সামাজিকীকরণ বাধাগ্রস্ত করছে। একটি শিশুর পরিবারের মধ্য দিয়ে যে সামাজিকীকরণ আরম্ভ হয় প্রাতিষ্ঠানিক বিদ্যালয়ের মাধ্যমে সে ধারা বজায় থাকে। শিশু যখন প্রথম বিদ্যালয়ে প্রবেশ করে তখনই আনুষ্ঠানিকভাবে তার দীক্ষা শুরু হয়। বিদ্যালয়ে শিশু বিশেষ দক্ষতা ও মূল্যবোধ অর্জন করে। এর মাধ্যমে পরিবারের সীমিত গন্ডি ছেড়ে বৃহত্তর সমাজ প্রচলিত জীবনধারার সঙ্গে শিশুর পরিচয় ঘটে। তার সহপাঠীরা বিভিন্ন পরিবারের সদস্য। তাদের একেকজনের মাঝে একক বৈশিষ্ট্য ফুটে উঠে, যার মাধ্যমে শিশুরা একে অপরকে জানার সুযোগ পায় এবং নিজের মাঝে সে বৈশিষ্ট্য লালন করতে থাকে। সে সমাজের মূল্যবোধের, ভাবাদর্শ, সমাজ অনুমোদিত আচার-আচরণ এবং নিষিদ্ধ কাজকর্ম সম্পর্কে জানার সুযোগ পায়। এখানেই বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষকের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। শিক্ষকের কথাবার্তা, আদেশ-উপদেশ এবং আচার ব্যবহার অনেক ক্ষেত্রেই শিশুর মনে গভীর রেখাপাত করে। বিদ্যালয় শুধু একাডেমিক শিক্ষাই দেয় না বরং অন্যান্য কার্যক্রম যেমন ক্রীড়ার আয়োজন, কোনো সাংস্কৃতিক উৎসবের আয়োজন ইত্যাদির মাধ্যমেও সামাজিকীকরণের শিক্ষা দিয়ে থাকে। এখানেই সে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা এবং নিয়মানুবর্তিতার শিক্ষা অর্জন করে। এ ছাড়া সঙ্গীদল শিক্ষার্থীদের সামাজিকীকরণ বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। একটি শিশু শিক্ষার্থী বিদ্যালয় পর্যায়ে বা তার বাসায় যাদের সঙ্গে দীর্ঘ সময় থাকে তাদের মধ্য থেকে সামাজিকতা বিভিন্ন আচার, রীতিনীতি গ্রহণ করে থাকে। তাদের অনুসরণ করে তাদের আচার-আচরণ এবং নিষিদ্ধ কাজকর্ম সম্পর্কে জানার সুযোগ পায়। এক্ষেত্রে বাবা বা মায়ের পাশাপাশি শিক্ষকের কথাবার্তা, আদেশ-উপদেশ এবং আচার ব্যবহার অনেক ক্ষেত্রেই শিশুকে সঠিক পথে পরিচালিত করতে সক্ষম। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ধর্মীয় শিক্ষা। ধর্মীয় শিক্ষা শিশুর মাঝে মূল্যবোধ সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। নিজ নিজ ধর্মীয় অনুশাসন থেকে শিশুরা সহজেই ব্যক্তিত্ব গঠন, সামাজিক সংহতির ধারণা লাভ, নৈতিক মানসিকতা সৃষ্টি, আদর্শ বিশ্বাস ও জীবনধারা গঠনে সহায়তা করে। এর মাধ্যমে শিশুর মাঝে সহজে সামাজিকীকরণ বৈশিষ্ট্যসমূহ বিস্তার লাভ করতে সক্ষম হয়। পারিপার্শ্বিক রাজনৈতিক পরিস্থিতিও শিশুকে অনেক কিছু শেখাতে সহায়তা করে। অস্থির রাজনীতি শিশুকে অস্থির, হিংসাত্মক মনোভাবসম্পন্ন গড়ে তুলতে পারে। আবার সুস্থধারার রাজনীতি শিশুর মাঝে নেতৃত্ব, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ শেখাতে সহায়তা করে। শিশু দলে দলে চলতে চলতে নেতৃত্ব শেখে এবং অন্যের অধীনে থেকে নিজেকে মানিয়ে কাজ করতে শেখে। শিশুর সামাজিকীকরণে মিডিয়া বা গণমাধ্যমের ভূমিকা ভুলে গেলে চলবে না। আজকাল ডিশ অ্যান্টেনা বা ইন্টারনেটের সহজলভ্যতার কারণে ভিন্ন সংস্কৃতির প্রতি শিশুরা আকৃষ্ট হচ্ছে।

এক্ষেত্রে অভিভাবকদের উচিত শিশুকে সঠিক গাইডলাইন দেওয়া। শিশুকে দেশীয় সংস্কৃতি শেখানো প্রত্যেক বাবা-মায়ের কর্তব্য। বেশ কিছুদিন আগেও ছেলেমেয়েরা মাঠে খেলাধুলা করে অবসর সময় পার করত। তখন যেমন পর্যাপ্ত ক্লাব ছিল, ছিল খেলার মাঠ। সে সময় ছিল না শিশুদের হাতে মোবাইল গেমস। খেলার মাঠেই দলে দলে খেলতে খেলতে শিশুর মধ্যে নেতৃত্বের বিকাশ ঘটত, পারস্পরিক মিথস্ক্রিয়া ছিল।  এখন সেসবের অভাব দেখা যাচ্ছে। আমাদের শিশুদের সামাজিকীকরণে বেশ প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়েছে। এটাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিতে হবে। শিশুর যথাযথ সামাজিকীকরণ নিশ্চিত করা আমাদের প্রত্যেকের দায়িত্ব।

লেখক : ইনস্ট্রাক্টর, উপজেলা রিসোর্স সেন্টার রামগঞ্জ, লক্ষ্মীপুর

spot_imgspot_img

ছবিটা তুলে রাখুন ঐতিহাসিক হয়ে থাকবে : ড. ইউনূস

গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক-কর্মচারীদের কল্যাণ তহবিলের ২৫ কোটি টাকা আত্মসাৎ এবং পাচারের অভিযোগে করা মামলায় জামিন পেয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান ও নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস।...

মায়ের ঘুমপাড়ানি সুর শান্তিধারা

আমাদের জোনাকজ্বলা গ্রাম বিদ্যুৎ তখনও দেখেনি। সন্ধ্যার কাছে বিকেল নতজানু হতেই সবুজ পাহাড়েরা মিশকালো হয়ে যায়। ফলে- আমরা চালের ফুটো দিয়ে চাঁদ দেখি, আর...

মাহবুবা ফারজানা নতুন তথ্য সচিব

তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের নতুন সচিব হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন বেগম মাহবুবা ফারজানা। তিনি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) ছিলেন। তাকে সচিব পদে পদোন্নতি...

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here