অর্থভুবন ডেস্ক
বাবা চেয়ারটা সোজা করেই বসতেন। তাঁর চোখে উপচে পড়ত আলো। বলতেন, ‘আমি ধন্য যে তোমাকে এই ঋণের ফাঁদে জড়াতে পেরেছি।’
বলতাম, ‘বাবা, তুমি হয়তো ঠিক। কিন্তু একবার ভেবে দেখো, এ রকম কতজনের কাছেই আমার ঋণ। ভেবে দেখো, সেই সব গরিব, গৃহহীন ভবঘুরের কথা, যাঁরা ভার্মল্যান্ডে যাতায়াত করতেন, গানবাজনা করতেন। তাঁদের সেই সব দুষ্টুমি আর পাগলামির কাছে কি আমার ঋণ জমে নেই? আর সেই বুড়ো আর বুড়ি, যাঁরা তাঁদের ধূসর কটেজে বসে থাকতেন, জঙ্গল থেকে বেরিয়ে এলেই অপূর্ব সব গল্প শোনাতেন জলপরি আর পাহাড়ের রূপকথার। তাঁরাই তো আমাকে শিখিয়েছিলেন পাথর এবং কৃষ্ণকায় জঙ্গলেও কবিতা লুকিয়ে রয়েছে। বাবা, ভাবো, সেই সব শুকনো চোয়ালের সাধু এবং নানদের কথা, যাঁরা গির্জার অন্ধকারে কত-কী না দেখেছেন, শুনেছেন। আমি তাঁদের সেই সব কিংবদন্তি থেকে ধার করে নিয়েছি শুধু। সেই সব কৃষক, যাঁরা জেরুজালেম চলে গিয়েছিলেন, তাঁদের দুরন্ত সব কার্যকলাপ লেখার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য আমি কি তাঁদের কাছে ঋণী নই? আর শুধু তো মানুষই নয়, এই গোটা প্রকৃতির কাছেই আমার কৃতজ্ঞতা এবং প্রাপ্তির শেষ নেই। আকাশের পাখি, পৃথিবীর মাটিতে হেঁটে যাওয়া জীবজন্তু, গাছ, ফুল—এরা সবাই তো আমায় জানিয়েছে তাদের গোপন কথা।’
বাবা এসব শুনে হাসতে হাসতে মাথা নাড়তেন। তবে আদৌ চিন্তিত হতেন না। তবু বলতাম, ‘তুমি বুঝতে পারছ না, এদের সবার কাছে প্রচুর ঋণ জমা হয়ে গেছে আমার। এই পৃথিবীতে কেউ বলতে পারবে না কীভাবে আমি তা ফেরত দেব। কিন্তু আমি ভাবলাম তুমি স্বর্গের বাসিন্দা এখন, তুমি হয়তো বলতে পারবে।’
বাবা একটু হালকা চালে বলতেন, ‘বাছা, এ নিয়ে চিন্তা কোরো না। তোমার সমস্যার সমাধান রয়েছে।’
‘বাবা, শুধু তো এঁরাই নয়, আমাদের ভাষা যাঁরা গড়েপিটে এই জায়গায় এনেছেন, তা ব্যবহার করতে আমায় শিখিয়েছেন, তাঁদের কাছেও আমি ঋণী।’
সুইডিশ লেখক সেলমা লেগারলফ ১৯০৯ সালে নোবেল পুরস্কার পান।