অর্থভুবন ডেস্ক
দেশের অনেক মানুষেরই আতঙ্কের জায়গা এখন বাজার। জিনিসপত্রের দাম লাগামছাড়া। মূল্যস্ফীতি এই সময়ের সবচেয়ে বড় সমস্যা। বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকারের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় অংশীজনদের সঙ্গে বৈঠক করে ডিম, আলু, পেঁয়াজ, চিনি ও ভোজ্য তেল—এই পাঁচ পণ্যের দাম নির্ধারণ করে দিয়েছিল।
বাজার বিশেষজ্ঞরা বারবারই বলে এসেছেন, সরকারের পক্ষ থেকে পণ্যের দাম নির্ধারণ করে দিলেই মূল্যবৃদ্ধির প্রবণতা রোধ করা যাবে না। তার কারণ বাজারে পণ্যমূল্য বৃদ্ধির পেছনে অনেক বিষয় থাকে। প্রথমে খুঁজে বের করতে হবে কী কারণে বাজারে মূল্যস্ফীতি হচ্ছে, সেটা।
বৈশ্বিক কারণে কখনো কখনো মূল্যস্ফীতি ঘটতে পারে। বাংলাদেশ আমদানিনির্ভর দেশ। আন্তর্জাতিক বাজারে কখনো কোনো পণ্যের দাম বেড়ে গেলে দেশের বাজারে তার প্রভাব পড়বে এটাই স্বাভাবিক।
বাজারে আলুর দাম চড়া হলেও এর সুফল কিন্তু উৎপাদনকারী কৃষকের ঘরে যাচ্ছে না। চলতি বছর মৌসুমের শুরুতে জানুয়ারি থেকে মার্চে কৃষকরা প্রতি কেজি আলু বিক্রি করেন ১০ থেকে ১২ টাকায়। জুলাই থেকে অস্থির হতে শুরু করে এই পণ্যের বাজার। উৎপাদন মৌসুমে আলুর পর্যাপ্ত দাম পান না কৃষকরা। কিন্তু পরে কৃষকের হাতে যখন পণ্যটি থাকে না তখন মজুদদাররা সিন্ডিকেট করেন। বাজার অস্থিতিশীল হয়।
বাজারে মাছ, মাংস ও সবজির দাম এখনো চড়া। পেঁয়াজ, আলু ও ডিমের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য সরকার নির্ধারণ করে দিলেও বাজারে তার প্রভাব পড়েনি। রাজধানীসহ সারা দেশের বিভিন্ন বাজারে অভিযান চলছে, এর পরও সরকারের নির্ধারিত দর কার্যকর হচ্ছে না। কালের কণ্ঠে সম্প্রতি প্রকাশিত এক খবরে বলা হয়েছে, পেঁয়াজ ও আলুর দাম না কমে উল্টো খুচরা বাজারগুলোতে সরবরাহ কমতে শুরু করেছে। বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বাড়তি লাভের উদ্দেশ্যে ব্যবসায়ীরা আলুর দাম বাড়িয়েছেন।
প্রথমে চার কোটি, পরে ছয় কোটি ডিম আমদানির অনুমোদন দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। প্রয়োজনে আলু আমদানির অনুমতি দেওয়া হবে বলে জানা গেছে।
মূলকথা হচ্ছে, সরবরাহ বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই। কোনো দ্রব্যের সরবরাহ কমে গেলে আর চাহিদা বাড়লে দাম বাড়ে, এটা অর্থনীতির সাধারণ সূত্র।
আমাদের দেশের মূল সমস্যা হচ্ছে, এখানে বাজার ব্যবস্থাপনা মোটেই সংগঠিত নয়। এর সুযোগ নিয়ে এক শ্রেণির ব্যবসায়ীকে বাজারে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ানোর প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হতে দেখা যায়। কোনো কোনো সময় বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করেও পণ্যের দাম বাড়ানো হয়। অনেক অসাধু ব্যবসায়ী চাহিদা সামনে রেখে কম দামে কিনে কয়েক গুণ বেশি দামে বিক্রি করেন। কিছু অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট করে পণ্যের কৃত্রিম সংকট তৈরি করেন। ব্যবসায়ীদের কারসাজিতে বাধ্য হয়েই ভোক্তাকে এসব পণ্য কয়েক গুণ বেশি দামে কিনতে হয়।
পণ্যমূল্যের স্ফীতি ও বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারকে আরো বেশি উদ্যোগী হতে হবে। প্রকৃত তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহের মাধ্যমে সঠিক সময়ে সঠিক পদক্ষেপ নিতে হবে। বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের যেসব বিভাগ ও সংস্থা রয়েছে, তাদের আরো সক্রিয় হতে হবে। এসব প্রতিষ্ঠানকে আরো দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে, তবে সবার আগে দরকার একটি বিকল্প বাজার ব্যবস্থা। সরকারের সংস্থাগুলোকে সক্রিয় করে একটি বিকল্প বাজার গড়ে তোলা গেলে ভোক্তার জন্য স্বস্তিকর একটি অবস্থা তৈরি করা সম্ভব হবে।
লেখক : সাংবাদিক
habib.alihabib@gmail.com