Saturday, December 7, 2024

পণ্যের সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে বাজারে

অর্থভুবন ডেস্ক

দেশের অনেক মানুষেরই আতঙ্কের জায়গা এখন বাজার। জিনিসপত্রের দাম লাগামছাড়া। মূল্যস্ফীতি এই সময়ের সবচেয়ে বড় সমস্যা। বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকারের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় অংশীজনদের সঙ্গে বৈঠক করে ডিম, আলু, পেঁয়াজ, চিনি ও ভোজ্য তেল—এই পাঁচ পণ্যের দাম নির্ধারণ করে দিয়েছিল।

বাণিজ্যমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে আইনের কঠোর প্রয়োগ করা হবে। বাজারে নেমেছিল ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। সরকারের পক্ষ থেকে দাম বেঁধে দেওয়ার পর গত ১৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চার দিনের অভিযানে ৪৬২ প্রতিষ্ঠানকে ২০ লাখ ৭২ হাজার টাকা জরিমানাও করে ভোক্তা অধিদপ্তর। কিন্তু এর পরও বাজারে সরকার নির্ধারিত পাঁচটি নিত্যপণ্যের নতুন দাম কার্যকর হয়নি।
 
ভারত থেকে ডিম আমদানির অনুমোদন দেওয়ার খবরেও খুচরা বাজারে কোনো প্রভাব পড়েনি।

বাজার বিশেষজ্ঞরা বারবারই বলে এসেছেন, সরকারের পক্ষ থেকে পণ্যের দাম নির্ধারণ করে দিলেই মূল্যবৃদ্ধির প্রবণতা রোধ করা যাবে না। তার কারণ বাজারে পণ্যমূল্য বৃদ্ধির পেছনে অনেক বিষয় থাকে। প্রথমে খুঁজে বের করতে হবে কী কারণে বাজারে মূল্যস্ফীতি হচ্ছে, সেটা।

যেসব কারণে বাজারে পণ্যের দাম বাড়ছে, সেগুলো রোধ করতে ব্যবস্থা নিতে হবে। বাজারে পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে সুদের হার ও মুদ্রার বিনিময় হার ব্যবস্থাপনাকে সরকার নিয়ন্ত্রণ করলে দাম নিয়ন্ত্রণে সুফল পাওয়া যাবে না।

বৈশ্বিক কারণে কখনো কখনো মূল্যস্ফীতি ঘটতে পারে। বাংলাদেশ আমদানিনির্ভর দেশ। আন্তর্জাতিক বাজারে কখনো কোনো পণ্যের দাম বেড়ে গেলে দেশের বাজারে তার প্রভাব পড়বে এটাই স্বাভাবিক।

কিন্তু যে পণ্যটি দেশেই উৎপাদন হয়, তার ক্ষেত্রে কী বলা যাবে? উদাহরণ দেওয়া যাক। ধরা যাক আলুর কথা। দেশে বছরে আলুর চাহিদা ৮৫ থেকে ৯০ লাখ টন। ২০২২-২৩ অর্থবছরে দেশে প্রায় এক কোটি ১২ লাখ টন আলু উৎপন্ন হয়েছে। সে অনুযায়ী দেশে আলুর মজুদ উদ্বৃত্ত থাকার কথা, আছেও। দেশের হিমাগারগুলোয় পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে বলে জানাচ্ছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। বিভিন্ন হিমাগারে যে পরিমাণ আলুর মজুদ রয়েছে, তা দিয়ে আগামী ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত চলবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশন। তাহলে আলুর দাম বাড়ছে কেন? কারণ অনুসন্ধান করলে দেখা যাবে, সরকারের বেঁধে দেওয়া দামে হিমাগার ও খুচরায় কোথাও আলু বিক্রি হচ্ছে না।

বাজারে আলুর দাম চড়া হলেও এর সুফল কিন্তু উৎপাদনকারী কৃষকের ঘরে যাচ্ছে না। চলতি বছর মৌসুমের শুরুতে জানুয়ারি থেকে মার্চে কৃষকরা প্রতি কেজি আলু বিক্রি করেন ১০ থেকে ১২ টাকায়। জুলাই থেকে অস্থির হতে শুরু করে এই পণ্যের বাজার। উৎপাদন মৌসুমে আলুর পর্যাপ্ত দাম পান না কৃষকরা। কিন্তু পরে কৃষকের হাতে যখন পণ্যটি থাকে না তখন মজুদদাররা সিন্ডিকেট করেন। বাজার অস্থিতিশীল হয়।   

বাজারে মাছ, মাংস ও সবজির দাম এখনো চড়া। পেঁয়াজ, আলু ও ডিমের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য সরকার নির্ধারণ করে দিলেও বাজারে তার প্রভাব পড়েনি। রাজধানীসহ সারা দেশের বিভিন্ন বাজারে অভিযান চলছে, এর পরও সরকারের নির্ধারিত দর কার্যকর হচ্ছে না। কালের কণ্ঠে সম্প্রতি প্রকাশিত এক খবরে বলা হয়েছে, পেঁয়াজ ও আলুর দাম না কমে উল্টো খুচরা বাজারগুলোতে সরবরাহ কমতে শুরু করেছে। বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বাড়তি লাভের উদ্দেশ্যে ব্যবসায়ীরা আলুর দাম বাড়িয়েছেন।

প্রথমে চার কোটি, পরে ছয় কোটি ডিম আমদানির অনুমোদন দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। প্রয়োজনে আলু আমদানির অনুমতি দেওয়া হবে বলে জানা গেছে।

মূলকথা হচ্ছে, সরবরাহ বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই। কোনো দ্রব্যের সরবরাহ কমে গেলে আর চাহিদা বাড়লে দাম বাড়ে, এটা অর্থনীতির সাধারণ সূত্র।

আমাদের দেশের মূল সমস্যা হচ্ছে, এখানে বাজার ব্যবস্থাপনা মোটেই সংগঠিত নয়। এর সুযোগ নিয়ে এক শ্রেণির ব্যবসায়ীকে বাজারে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ানোর প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হতে দেখা যায়। কোনো কোনো সময় বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করেও পণ্যের দাম বাড়ানো হয়। অনেক অসাধু ব্যবসায়ী চাহিদা সামনে রেখে কম দামে কিনে কয়েক গুণ বেশি দামে বিক্রি করেন। কিছু অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট করে পণ্যের কৃত্রিম সংকট তৈরি করেন। ব্যবসায়ীদের কারসাজিতে বাধ্য হয়েই ভোক্তাকে এসব পণ্য কয়েক গুণ বেশি দামে কিনতে হয়।

পণ্যমূল্যের স্ফীতি ও বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারকে আরো বেশি উদ্যোগী হতে হবে। প্রকৃত তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহের মাধ্যমে সঠিক সময়ে সঠিক পদক্ষেপ নিতে হবে। বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের যেসব বিভাগ ও সংস্থা রয়েছে, তাদের আরো সক্রিয় হতে হবে। এসব প্রতিষ্ঠানকে আরো দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে, তবে সবার আগে দরকার একটি বিকল্প বাজার ব্যবস্থা। সরকারের সংস্থাগুলোকে সক্রিয় করে একটি বিকল্প বাজার গড়ে তোলা গেলে ভোক্তার জন্য স্বস্তিকর একটি অবস্থা তৈরি করা সম্ভব হবে। 

লেখক : সাংবাদিক

habib.alihabib@gmail.com

 
spot_imgspot_img

ছবিটা তুলে রাখুন ঐতিহাসিক হয়ে থাকবে : ড. ইউনূস

গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক-কর্মচারীদের কল্যাণ তহবিলের ২৫ কোটি টাকা আত্মসাৎ এবং পাচারের অভিযোগে করা মামলায় জামিন পেয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান ও নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস।...

মায়ের ঘুমপাড়ানি সুর শান্তিধারা

আমাদের জোনাকজ্বলা গ্রাম বিদ্যুৎ তখনও দেখেনি। সন্ধ্যার কাছে বিকেল নতজানু হতেই সবুজ পাহাড়েরা মিশকালো হয়ে যায়। ফলে- আমরা চালের ফুটো দিয়ে চাঁদ দেখি, আর...

মাহবুবা ফারজানা নতুন তথ্য সচিব

তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের নতুন সচিব হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন বেগম মাহবুবা ফারজানা। তিনি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) ছিলেন। তাকে সচিব পদে পদোন্নতি...

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here