অর্থভুবন প্রতিবেদক
চরম ডলার সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে দেশ। এই সংকট নিরসনের একমাত্র উপায় ডলার আয় বৃদ্ধি। কিন্তু রপ্তানি আয়ে বৈচিত্র্য না থাকায় অল্প কয়েকটি খাত থেকে ডলার আয় হচ্ছে। রপ্তানিতে দেশের ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের ভূমিকা রাখার সুযোগ থাকলেও প্রক্রিয়াগত জটিলতার কারণে তারা সহজে পণ্য রপ্তানি করতে পারেন না। ব্যাংকগুলো এসএমই খাতে ঋণ বিতরণ করলেও রপ্তানিতে আগ্রহ থাকা ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা অবহেলিত। এমন পরিস্থিতিতে দেশের ডলার সংকট নিরসন ও প্রয়োজনীয় কর্মসংস্থান তৈরির উদ্দেশ্যে এসএমই সহায়ক নীতিমালা প্রয়োজন বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। গতকাল সোমবার বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট (বিআইবিএম)-এ অনুষ্ঠিত এক সেমিনারের আলোচনায় উঠে আসে এসব তথ্য।
অনুষ্ঠানে গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন বিআইবিএম-এর অধ্যাপক ড. শাহ মো. আহসান হাবিব। তিনি বলেন, ২০২১ সালে এসএমই খাতে বিনিয়োগের ২৫ শতাংশ বৈদেশিক বাণিজ্যে ব্যবহার হয়েছে। তবে আমদানির লাগাম টেনে ধরায় ২০২২ সালে সেই হার নেমে এসেছে মোট এসএমই ঋণের ২১ শতাংশে। কিন্তু দেশের অর্থনীতি বিবেচনায় এই হার আরও বেশি হওয়া উচিত ছিল। গবেষণা প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, আমদানি-রপ্তানির সঙ্গে জড়িত মোট লেনদেনের মাত্র ৯ শতাংশ এসএমই উদ্যোক্তাদের অবদান।
রপ্তানির আবেদন বাতিল হওয়া এসএমই উদ্যোক্তাদের জন্য একটি বড় বাধা বলে উল্লেখ করা হয় গবেষণায়। মোটা দাগে এসএমই উদ্যোক্তাদের রপ্তানি আবেদন বাতিলের পাঁচটি কারণ উল্লেখ করা হয়েছে। প্রথমত, অপর্যাপ্ত জামানত। জামানতের অভাবে ৩৬ শতাংশ এসএমই উদ্যোক্তার রপ্তানি আবেদন বাতিল হয়। উচ্চ সুদহারের কারণে বাতিল হয় ১৮ শতাংশ, পূর্বের লেনদেনের তথ্য না থাকায় ১৭ শতাংশ, উচ্চ ঝুঁকির কারণে ১১ শতাংশ ও পর্যাপ্ত দলিলের অভাবে ১০ শতাংশ আবেদন বাতিল হয়। পাঁচটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক, দুটি বিদেশি ও ২৩টি বেসরকারি ব্যাংকের তথ্যের ওপর ভিত্তি করে এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে।
অনলাইনে যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর কাজী ছাইদুর রহমান বলেন, অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন এসএমই উদ্যোক্তারা। বিশেষ করে দরিদ্র দেশ এবং স্বল্পোন্নত দেশগুলোতে এর হার বেশি। এসএমই উদ্যোক্তাদের সরাসরি পণ্য রপ্তানি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে অবদান রাখতে পারে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিআইবিএম-এর সুপারনিউমারারি অধ্যাপক ও জনতা ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুছ ছালাম আজাদ বলেন, আমি যখন জনতা ব্যাংকে ছিলাম তখন বড়দের চাপে ছোট গ্রাহকদের দেখার সুযোগ হতো না। তবে এখন জনতা ব্যাংক এসএমইতে গুরুত্ব দিয়েছে। যখন এসএমইর কথা ভাবলাম তখনই দেশে মহামারী আঘাত হানল। তারপরই শুরু হলো ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ। আমরা এসএমই ফাইন্যান্সে যতটা এগিয়েছি এসএমই ট্রেড ফাইন্যান্সে ঠিক ততটাই পিছিয়েছি। রপ্তানিতে পণ্য বহুমুখীকরণের অন্যতম একটি দিক হতে পারে এই এসএমই ট্রেড ফাইন্যান্স।
তিনি বলেন, পুরো দেশব্যাপী এসএমই গ্রাহক এবং আমদানি-রপ্তানির সঙ্গে জড়িত ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা অবহেলিত। তারা চাইলেই প্রত্যন্ত অঞ্চলে অ্যাকাউন্ট খুলতে পারে না। শহরে যেতে হয়। অনেক গ্রাহক তো ঢাকায় এসে অ্যাকাউন্ট খুলেন এবং লেনদেন করেন। ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের একটি বড় অংশই ব্যাংকের বাইরে রয়ে গেছে। তাদের ব্যাংকের আওতায় আনতে হবে। পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে প্রয়োজনে তাদের প্রণোদনা দিতে হবে। এছাড়া জামানতের শর্ত শিথিল করে একটি নীতিমালা তৈরি করা প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট (বিআইবিএম)- ‘বিদেশি বাণিজ্য অর্থায়ন এবং এসএমই’র মধ্যে সেতুবন্ধন’ শীর্ষক সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিআইবিএম-এর সহযোগী অধ্যাপক এবং পরিচালক (গবেষণা, উন্নয়ন ও কনসালটেন্সি) ড. আশরাফ আল মামুন। সভাপতিত্ব করেন বিআইবিএম-এর মহাপরিচালক ড. মো. আখতারুজ্জামান।
সেমিনারে গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন বিআইবিএম-এর অধ্যাপক (সিলেকশন গ্রেড) ড. শাহ্ মো. আহসান হাবীব। গবেষণা দলে অন্যদের মধ্যে রয়েছেন বিআইবিএম-এর সহকারী অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ এবং রাহাত বানু; বিআইবিএম-এর প্রভাষক রাজীব কুমার দাশ; বাংলাদেশ ব্যাংকের অতিরিক্ত পরিচালক প্রদীপ পাল; ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি’র সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট মাহমুদুর রহমান।