অর্থভুবন ডেস্ক
জাপানে প্রবীণের সংখ্যা ক্রমেই বেড়ে চলেছে আর সেই অনুপাতে কমছে উৎপাদনশীল কর্মক্ষম তরুণ-যুবকের সংখ্যা—এ তথ্য পুরনো। নতুন খবর হলো, এই প্রথমবারের মতো সূর্যোদয়ের দেশ হিসেবে পরিচিত জাপানের প্রতি ১০ জন নাগরিকের মধ্যে একজনের বয়স এখন ৮০ বা তার বেশি। জাতীয় তথ্য আরো বলছে, সাড়ে ১২ কোটি জনসংখ্যার ২৯.১ শতাংশের বয়স ৬৫ বছর বা তার বেশি। এটিও একটি রেকর্ড।
জাপানের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব পপুলেশন অ্যান্ড সোশ্যাল সিকিউরিটি রিসার্চের গবেষণা থেকে মনে করা হচ্ছে, ২০৪০ সালের মধ্যে ৬৫ বছরের বেশি বয়সী জনসংখ্যার হার আরো বেড়ে হবে ৩৪.৮ শতাংশ।
জাপানে বয়স্ক কর্মীর হারও বিশ্বের প্রধান অর্থনীতির দেশগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ।
এমন প্রেক্ষাপটেই জাপান আগামী অর্থবছরের জন্য রেকর্ড অঙ্কের বাজেট অনুমোদন করেছে। ক্রমবর্ধমান সামাজিক নিরাপত্তা ব্যয় এর আংশিক কারণ। জীবনযাত্রার ক্রমবর্ধমান ব্যয় এবং কুখ্যাত রকম দীর্ঘ কর্মঘণ্টার কারণে জন্মহার বাড়ানোর প্রচেষ্টা সামান্যই সাফল্য পেয়েছে।
জনসংখ্যাসংক্রান্ত এই সমস্যায় উদ্বিগ্ন জাপানের সরকার। প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা গত জানুয়ারিতে বলেছিলেন, ক্রমহ্রাসমান জন্মহারের কারণে জাপান একটি কার্যকর সমাজ হিসেবে কাজ করতে ব্যর্থ হওয়ার ঝুঁকিতে আছে।
এশিয়ার অন্যান্য কিছু দেশও একই রকম জনসংখ্যাগত চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। গত বছর ১৯৬১ সালের পর থেকে প্রথমবারের মতো চীনের জনসংখ্যা হ্রাস পেয়েছিল। অন্যদিকে দক্ষিণ কোরিয়া বিশ্বের সর্বনিম্ন জন্মহারের রেকর্ড করে।
জাপানে ১৫ থেকে ২৯ বছর বয়সী অন্তত এক লাখ ৭৭ হাজার ৬০০ জন নাগরিক পরিবারের একজন বৃদ্ধ সদস্যের দেখভাল করে। তাদের অনেকেই খুব সন্তুষ্টির সঙ্গে যে কাজটা করে, তা নয়। এমন পরিবারের সংখ্যাও বাড়ছে, যেখানে একজন বয়স্ক ব্যক্তি আরেক প্রবীণের দেখাশোনা করেন।
এর পরও জন্মহার হ্রাসের সমাধান হিসেবে বিদেশ থেকে কর্মী নেওয়ার বিষয়ে জাপানের সরকার দ্বিধান্বিত। বিদেশিদের নিজের সমাজের অংশ মনে করার বিষয়ে অনেক সাধারণ জাপানির মনে দ্বিধা রয়েছে। এ কারণেই জাপান এখনো বিশ্বের সবচেয়ে জাতিগতভাবে একজাতীয় দেশগুলোর অন্যতম। সেখানে বিদেশিরা মোট জনসংখ্যার ২ শতাংশেরও কম। অভিবাসন বিষয়ে বড় ধরনের উদ্যোগ নেওয়া তাই সরকারের জন্য অত্যন্ত সংবেদনশীল বিষয়। ২০০৮ সালে সরকার বিদেশি নার্স ও সেবাকর্মীদের অনুমতি দেওয়া শুরু করে। কিন্তু এ জন্য যোগ্যতার শর্ত বেশ কঠিন। এই কাজের ক্ষেত্রটিতে জাপানে যাওয়া বিদেশির সংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় নগণ্য।
বহুজাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান মিজুহো ইন্টারন্যাশনালের কর্মকর্তা সেজিরো তাকেশিতা বলেন, ‘জাপান বিদেশিদের অভিবাসন শুরুর বিষয়ে অত্যধিক রক্ষণশীল। আমাদের নিয়ন্ত্রণ শিথিল করা দরকার। তবে জাপানকে এও নিশ্চিত হতে হবে যে অভিবাসনের সমজাতীয় জনগোষ্ঠী আদর্শের ক্ষতি করবে না। কারণ ইউরোপে বহুসংস্কৃতিবাদের ব্যর্থতা সামাজিক সংঘাত ডেকে এনেছে।’
সেজিরো তাকেশিতার এই মতামত জাপানের মূলধারার মতো নয়। তার পরও রেস্তোরাঁর মতো সেবা শিল্প খাত বিদেশি ছাত্রদের নিয়োগ দিয়ে সাধারণ লোকের কাছ থেকে কঠোর প্রতিক্রিয়া পেয়েছে, বিশেষ করে শুরুর দিকে। অনেক জাপানিই অনুযোগ করে, ভালো করে জাপানি ভাষা না জানা লোককে কেন নিয়োগ দেওয়া হলো!
কয়েক শ বা কয়েক হাজার বিদেশি ছাত্রকে রেস্তোরাঁ বা দোকানে কাজ করার অনুমতি দিয়ে জাপানের প্রবীণদের সেবাকর্মী সংকটের সমাধান হবে না। চিন্তার বিষয় হচ্ছে, এ মুহূর্তে এর কোনো দ্রুত সমাধানও চোখে পড়ছে না। সূত্র : বিবিসি