অর্থভুবন প্রতিবেদক
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী মুশফিকুর রহিম। অসুস্থ হয়ে ভর্তি ছিলেন হাসপাতালে। একসময় জানতে পারেন, তাঁর দুটো কিডনিই বিকল হয়ে গেছে। চিকিৎসায় খরচ পড়বে প্রায় ৩৫ লাখ টাকা। জন্মের ৪৩ দিন আগে হারিয়েছেন বাবাকে। মা সেলাই করে সংসার চালান। দরিদ্র পরিবারটির পক্ষে এত টাকা জোগাড় করা অসম্ভব।
এ সময়ই এগিয়ে আসেন মুশফিকের বন্ধুরা। মুশফিক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কবি জসীমউদ্দীন হলের আবাসিক শিক্ষার্থী। সবার আগে উদ্যোগী হন এই হলের বন্ধুরাই। মাঠ পর্যায়ে হলের ২০-২৫ জন বন্ধু নিয়মিত কাজ করেছেন। দায়িত্ব ভাগ করে অনুদান সংগ্রহ কার্যক্রমকে গতিশীল করেছেন।
প্রতিদিনের অনুদান জমা রাখতেন মৈশান শরীফ; অনলাইনের বিভিন্ন কাজ—ব্যানার বানানো, হালনাগাদ তথ্য দেওয়া ও (ফেসবুক) পেজ ব্যবস্থাপনা—করেছেন শহিদুজ্জামান রবিন; মুশফিকের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ, সমন্বয়ের কাজটি করেছেন আরিফুজ্জামান শাকের, রেদোয়ান রিয়াদ, তবারক হোসেন, মারুফ হোসেন ও মো. জসীমউদ্দিন। আর মুশফিকের বিভাগের সঙ্গে সমন্বয় করেছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের বন্ধু আরিফ জাসান।
এ ছাড়া নেসার উদ্দিন, সিয়াম ওয়ালিদ, ইয়াসিন আরাফাত, মোহাম্মদ ইউসুফ, শিহাব হাসান, সৈয়দ মওলা, মুনিরুল হাসান, তামজিদ হোসেন, তোফাজ্জল হোসেন, সাইফুল ইসলাম, জাকির হোসেন, মির সাফায়েত, মো. রুকনুজ্জামানসহ ব্যাচের অন্যান্য বন্ধুরাও কাজ করেছেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা ছাত্রকল্যাণ সমিতি তিতাসের সভাপতি নূর আল আমিন ও সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল হাসানের সহযোগিতাও পেয়েছেন বলে জানান মুশফিকের বন্ধুরা।
৪২ দিনে ৩৫ লাখ টাকা জোগাড় করা চাট্টিখানি কথা নয়। জটিল এই কাজই করে দেখিয়েছেন মুশফিকের বন্ধুরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে সাহায্যের আবেদন জানিয়ে ব্যানার লাগিয়েছেন তাঁরা। প্রতিটি বিভাগে, হলে, বাস রুট কমিটি—সবার কাছে পৌঁছেছেন। পাশাপাশি ‘ফান্ড ফর মুশফিক’ নামে একটি ফেসবুক পেজ খুলে, সেখান থেকে প্রচারকাজ চালিয়েছেন তাঁরা।
মুশফিকের সঙ্গে হলে একই ঘরে থাকতেন বন্ধু শহিদুজ্জামান রবিন। তিনি অনুদান সংগ্রহকারী দলটির নিয়মিত সদস্য। রবিন বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়জীবনে এত বড় ধরনের ফান্ড সংগ্রহের কাজের অভিজ্ঞতা আমাদের ছিল না। এই পুরো জার্নিটাই ভোলার নয়। রাত জেগে আমরা কাজ করেছি। বিভিন্ন ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী, যাঁরা ভালো অবস্থানে আছেন, তাঁদের কাছে গিয়েছি। জাতীয় ও ক্যাম্পাসভিত্তিক পত্রিকা, পোর্টালে প্রচারের ব্যবস্থা করেছি। পরীক্ষা ও একাডেমিক চাপের মাঝে সবকিছু করাটা চ্যালেঞ্জ ছিল।’
ইতিমধ্যে মুশফিকের পরিবারের কাছে সব টাকা বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। এখন ভারতের একটি হাসপাতালে আছেন মুশফিক। সেখানে তাঁর চিকিৎসা শুরু হয়েছে। চলছে ডায়ালাইসিস ও অন্যান্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা। এর আগে এক ভিডিও বার্তায় বন্ধু ও অনুদানদাতাদের উদ্দেশ্যে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন মুশফিক ও তাঁর পরিবার। মুশফিক সুস্থ হয়ে ফিরলেই বন্ধুদের কষ্ট সার্থক হবে।