ক্রিয়া ডেস্ক,অর্থভুবন
বাংলাদেশের এশিয়া কাপ অধ্যায় শেষ।শিরোপার রেস থেকে বাংলাদেশ ছিটকে গেছে পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার কাছে হেরে।
পরপর দুই হারের পর মাঝের বিরতির এ সময়টায় তিন দিনের ছুটি ঘোষণা করেছেন কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে। প্রসূতি স্ত্রীর পাশে থাকতে দেশে ফিরেছেন মুশফিকুর রহিম। দলের বেহাল দশায় সতীর্থদের রেখে দেশে চলে এসেছেন সাকিব আল হাসানও। এ সময়ে কোচ খেলোয়াড়দের সঙ্গে কথা বলবেন, শুনবেন ভালো না করার ফিরিস্তি। সেসবের মধ্যে নেই অধিনায়ক, কারণ সাকিব কথায় নন কাজে বিশ্বাসী।
সাকিবের নেতৃত্বে ৫৪টি ওয়ানডে ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ জিতেছে ২৪টি ম্যাচ, হেরেছে ২৯ ম্যাচে আর বাকি ১ ম্যাচ অমীমাংসিত। ২০০৯ সালে ওয়ানডে অধিনায়কের দায়িত্ব প্রথমবারের মতো পেয়েছিলেন সাকিব। মাশরাফী বিন মোর্ত্তজার চোটের কারণে নেতৃত্বের দায়িত্ব চলে আসে সাকিবের কাছে, শুরুটাই করেছিলেন বিদেশের মাটিতে ওয়ানডে সিরিজ জিতে। যদিও সেই দলটা ছিল উইন্ডিজের মূল দলের ক্রিকেটারদের বাইরে রেখে গড়া তৃতীয় সারির একটি দল।
২০১০ সালে টানা ১৩ ওয়ানডে ম্যাচে হারা বাংলাদেশ দলের ভাগ্যটা বদলাতে শুরু করে দেশের মাটিতে বিশ্বকাপে অংশ নেওয়ার আগে আগে। সাকিবের নেতৃত্বে নিউজিল্যান্ডকে দেশে ৪-০ ব্যবধানে ওয়ানডে সিরিজে হারালেও বিশ্বকাপে ৫৮ ও ৭৮ রানে অলআউট হওয়ার লজ্জার পর জিম্বাবুয়ে সফরে গিয়ে ওয়ানডে সিরিজ হেরে আসায় নেতৃত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় অধিনায়ক সাকিব ও সহঅধিনায়ক তামিম ইকবালকে।
সে সময় সাকিব ও তামিমকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়ার ব্যপারে তৎকালীন বিসিবি পরিচালক ও মিডিয়া কমিটির চেয়ারম্যান জালাল ইউনুস বলেছিলেন, ‘নেতৃত্বে সন্তোষজনক ভূমিকা পালন না করায় সাকিব আল হাসান ও তামিম ইকবালকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তারা সফরে দলকে নেতৃত্ব দিতে ব্যর্থ হয়েছে। সাকিবের বিরুদ্ধে শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ পাওয়া গেছে। আমরা ভেবেছিলাম তাদের আচরণের উন্নতি হবে কিন্তু আমাদের কাছে কঠিন রাস্তা নেওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় ছিল না।’
১২ বছরে সাকিব ক্রিকেটার হিসেবে অনেক উন্নতি করেছেন, বিশ্বের বিভিন্ন ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে খেলছেন। তবে আচরণ বদলেছে সামান্যই। বিসিবিও সাকিবের শৃঙ্খলা ভঙ্গের একের পর ঘটনার পর এসবকে স্বাভাবিক ব্যাপার বলেই মেনে নিয়েছে, তাই সাকিবের জন্য সাত খুন মাফ। এই যেমন দেশে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে ম্যাচের পরদিনই সিলেট থেকে ঢাকায় চলে আসেন ব্যক্তিগত কাজে। বিমানের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর হওয়া, বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে অংশ নেওয়া, সসের বিজ্ঞাপন করাসহ অনেক ব্যক্তিগত কাজই সিরিজের মাঝে করেছেন সাকিব। তখন অবশ্য সাকিব অধিনায়ক ছিলেন না, নতুন করে ওয়ানডের নেতৃত্ব পাওয়ার পর তার আচরণে বদল আসেনি।
এশিয়া কাপ খেলার আগে দলের সঙ্গে একদিনও অনুশীলনে যোগ দেননি সাকিব। ব্যস্ত ছিলেন কানাডায় গ্লোবাল টি-টোয়েন্টি ও শ্রীলঙ্কায় এসএলপিএল খেলতে। এশিয়া কাপ খেলতে যাওয়ার আগে বিজ্ঞাপনের কাজ অবশ্য ঠিকই করে গেছেন সাকিব। নগদের প্রচারণায় ফেসবুকে ‘আমি আর খেলব না। খেলবে কে জানাচ্ছি’ এমন বিভ্রান্তিমূলক স্ট্যাটাস এমন সময়ে দিয়েছেন, যখন তামিম ইকবালের অবসরকাণ্ড, প্রত্যাবর্তন-সংক্রান্ত নানান ঘটনার জেরে দেশের ক্রিকেট অঙ্গনের পরিস্থিতি জটিল।
এশিয়া কাপের মাঝপথে সাকিব ব্যক্তিগত কারণেই ফিরে এসেছেন দেশে। যদিও শোনা গিয়েছিল, ফরাসি প্রেসিডেন্টের আগমনে আয়োজিত নৈশভোজে ক্রীড়াঙ্গনের প্রতিনিধি হিসেবে যোগ দিতেই সাকিব এসেছেন, তবে সেই নৈশভোজেও তাকে দেখা যায়নি। তাই প্রশ্ন উঠেছে, ব্যক্তিগত কাজের বদলে শ্রীলঙ্কায় দলের সঙ্গে থাকলে কি সতীর্থদের আরেকটু উৎসাহ দিতে পারতেন না অধিনায়ক?
সাকিবকে দীর্ঘদিন কাছ থেকে দেখা নাজমুল আবেদীন ফাহিম মনে করেন, দেশে থাকলেও এ লম্বা বিরতিতে ক্রিকেট থেকে দূরেই থাকতেন সাকিব। ‘সাকিব কোনো কিছুই খুব আওয়াজ দিয়ে করতে পছন্দ করে না, সে খুব নীরবে-নিভৃতে কাজ করে। মাশরাফীর সময়ে যে ধরনের অধিনায়কত্বের দর্শন ছিল, তার নেতৃত্বের দর্শনটা একদমই ভিন্ন। সে লোকদেখানো কিছু করবে না। আমি নিশ্চিত ঢাকায় খেলা হলেও সে এত লম্বা বিরতিতে দলের সঙ্গে থাকত না’, দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিকেএসপির ক্রিকেট উপদেষ্টা এবং সাকিবসহ অনেক ক্রিকেটারের গুরু।
দলের সঙ্গে এই মুহূর্তে না থাকলেও খেলোয়াড়দের পাশে অধিনায়ক হিসেবে ঢাল হিসেবেই আছেন সাকিব। নাঈম শেখকে আগলেছেন সংবাদ সম্মেলনে। এ প্রসঙ্গেই ফাহিম বললেন, ‘সবাই যখন খারাপ করায় নাঈমের সমালোচনা করছে, তখন সাকিব কিন্তু ঠিকই তার পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে তাকে ডিফেন্ড করেছে। হয়তো বলেছে পরের ম্যাচে শূন্য করলেও সমস্যা নেই। সে সবসময় খেলোয়াড়দের পাশে থাকে, তবে তার ধরনটা আলাদা।’
এভাবেই দলের সঙ্গে না থাকলেও ছায়া হয়ে ঠিকই খেলোয়াড়দের পাশে আছেন মিস্টার অলরাউন্ডার।