অর্থভুবন প্রতিবেদক
গড়াই নদবিষয়ক গবেষণাকাজের জন্য বহুবার যেতে হয়েছে কুষ্টিয়া জেলার নানা জনপদে। গ্রামীণ পথে হেঁটে হেঁটে কখনোবা গাড়িতে বসে দেখেছি এ অঞ্চলের গাছপালা ও প্রকৃতি। শীতের সময় গড়াই নদের কোথাও কোথাও শুকিয়ে যায়। তখন গ্রামের মানুষ নদ পার হয় হেঁটে। গড়াই নদের পাড়ে বুনো ঝোপে অনেক বুনো ফুলের সঙ্গেই দেখা হয়েছিল।
কিন্তু যে ফুলটির নরম পাপড়ি ও ঘ্রাণ মনে দাগ কেটেছিল, সেটি ছিল এক প্রজাতির বুনো বেলি। সড়কের পাশে আকন্দ বনের ধারে ফুটেছিল কয়েকটি বুনো বেলি। তাতে ফুটেছে স্নিগ্ধ নরম সাদা রঙের ফুল। সেই ফুলের সুঘ্রাণে ভ্রমর ছুটছে তার পানে। কিছুক্ষণ ফুলগুলোর দিকে তাকিয়ে ছিলাম। ছুঁয়ে দেখেছি ফুলের নরম পাপড়ি। ছেলেবেলার মতো আর ফুল ছিঁড়ে হাতে নিইনি। কারণ, এখন জানি এই ফুলগুলোর মধু অন্য কোন জীবের জন্য উপকারী।
বেলি ফুলের প্রজাতিগুলোকে ইংরেজিতে জেসমিন বলা হয়। আমরা যেগুলোকে জুঁই, চামেলি, কুন্দ ও বেলি নামে চিনি, সেগুলোর সব কটি একই পরিবারের (ওলিয়েসি) উদ্ভিদ। বাংলা ভাষায় বিভিন্ন প্রজাতির জেসমিনকে আমরা ভিন্ন ভিন্ন নামে ডাকি।
ছেলেবেলায় বেলি ফুল নিয়ে অনেক স্মৃতি আছে। বেলি ফুলের মালা বানাতাম আমরা বন্ধুরা মিলে। কখনো কোনো মায়াবী বেলি ফুল বইয়ের ভাঁজে রেখে দিতাম। অনেক দিন পর শুকানো বেলিও আমাদের ভালো লাগাত। বেলি ফুল প্রতিদিনই ফুটত বাড়ির আঙিনায় এবং প্রতিদিনই বেলি ফুল ছিঁড়ে তার পরশ নিতাম। পরিবেশ গবেষণা এবং গাছপালা-পাখির সন্ধানে বাংলাদেশে নানা প্রান্তে ঘোরার জন্য কিছু প্রজাতির বুনো বেলি ফুলের দেখা পেয়েছি।
বৃহত্তর সিলেট জেলার বনে, পার্বত্য চট্টগ্রাম ও শাল বন এলাকায় কিছু বুনো বেলির সন্ধান পেয়েছি। হতে পারে তারা জুঁই, চামেলি, যূথী বা যূথিকা! সিলেটের পাথারিয়া বনেও দেখেছি এক সুগন্ধি বুনো বেলি। প্রকৃতিবিদ দ্বিজেন শর্মা আমাকে বলেছিলেন, সিলেটের বনে গিয়ে বুনো জেসমিন দেখার জন্য।
পাহাড় ও সমতল এলাকার গ্রামীণ পরিবেশে যে বুনো বেলি জন্মে, তাদের বাহ্যিক বৈশিষ্ট্যের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। বেলি পরিবারে জুঁই ফুলের পাপড়িগুলো অনেকটাই চিকন এবং পাপড়ির বিন্যাস ঘন নয়। খুব সহজেই বেলি থেকে আলাদা করা যায়। উদ্ভিদ লতানো এবং বড় ঝাড় আকারে বাড়ে। এটিকে কেউ যূথী ও যূথিকা নামে চেনেন। এ ফুলের মিষ্টি সুবাস মন ভালো করে দেয়।
বেলি ফুল প্রধানত গ্রীষ্ম ও বর্ষায় ফোটে। কয়েকটি প্রজাতির ফুল বসন্তেও ফোটে। এদের প্রতিটিই বহুবর্ষজীবী। কোনোটি লতা, কোনোটি গুল্ম। শহরের বাড়ির টবে অনেক প্রজাতির বেলি দেখা যায়।