অর্থভুবন প্রতিবেদক
ভ্রমণবিষয়ক ওয়েবসাইট ট্রিপ অ্যাডভাইজারে দেওয়া এক পর্যটকের রিভিউয়ের ভাষা যে কারো দৃষ্টি আকর্ষণ করার মতোই, ‘পিয়ার্স ব্রসনানকে একনজর দেখতে চাইলে আপনাকে অবশ্যই ম্যাকলোতে আসতে হবে।’ সেখানে গেলে সত্যি সত্যিই জেমস বন্ডের দেখা মেলে। তবে সশরীরে নয়, দেয়ালে টাঙানো ছবিতে।
ব্রসনান সেখানে একাও নন।
একটি সংশোধনীও বোধ হয় এখানে দেওয়া যেতে পারে।
তিব্বতের স্বাধীনতা আন্দোলন এখন পর্যন্ত সফল না হওয়ায় আর তাঁদের ফেরাও হয়নি। বরং এত দিনে বংশপরম্পরায় তাঁদের আরো বিস্তৃতিই ঘটেছে এখানে। তা ঘটলেও নিজেদের স্বাধীনতা আন্দোলন থেকে তাঁরা পিছু হটেননি। স্বাধিকারের স্বপ্নে তাঁদের ভারতনির্ভরতাও ম্যাকলয়েডগঞ্জের দেয়ালে দেয়ালে সাঁটা পোস্টারেই বোঝা যায়, ‘জয় ভারত, জয় তিব্বত। তিব্বতের স্বাধীনতা মানেই ভারতের নিরাপত্তা।
শান্তিতে নোবেল পাওয়া এই ধর্মগুরুর সঙ্গে দেখা করতেই এই সহস্রাব্দের শুরুর দিকে ধর্মশালায় এসেছিলেন ব্রসনান। একই সঙ্গে ধর্মশালার সৌন্দর্যে ডুব দিয়ে গেছেন যেমন, তেমনি চেখে গেছেন ম্যাকলোর খাবারের স্বাদও। জেমস বন্ড সিরিজের ‘গোল্ডেন আই’, ‘টুমরো নেভার ডাইজ’, ‘দ্য ওয়ার্ল্ড ইজ নট এনাফ’ এবং ‘ডাই অ্যানাদার ডে’ নামের মুভিগুলোতে সিক্রেট এজেন্টের ভূমিকায় অভিনয় করা হলিউড তারকা প্রকাশ্যেই দাঁড়িয়েছিলেন তিব্বতিদের পাশে। নিজেদের শিকড়ে ফিরতে না পারা এই মানুষগুলো ম্যাকলয়েডগঞ্জকেই বানিয়ে ফেলেছেন একটুকরা তিব্বত। শহরটি তাই শুধুই আর ভারতীয়দের থাকেনি। এখানে স্থাপত্য, জীবনাচরণ, পোশাক-আশাক থেকে শুরু করে খাওয়াদাওয়ায় তিব্বতেরও এমন ছাপ যে ম্যাকলয়েডগঞ্জের আরেকটি নামই হয়ে গেছে ‘লিটল লাসা’।
ম্যাকলোর আশপাশে তাকালেই তা আরো স্পষ্ট হয়ে যায়। বিবিধ ব্যঞ্জনে পর্যটকদের রসনা তৃপ্ত করতে ম্যাকলো তো আছেই, অন্য রেস্তোরাঁগুলোর মধ্যে দু-একটির নামও একটু পড়ুন—হট হাউস অব তিব্বত, লাসা ক্যাফে। বিশেষ করে পৃথিবীর অন্য প্রান্ত থেকে ঘুরতে আসা পর্যটকদের কাছে সবচেয়ে বেশি বিকোনো খাবার এসব রেস্তোরাঁর তিব্বতি ডাম্পলিং। পর্যটকদের ভিড়ে গমগম করা এই চক (মোড়) পেরিয়েই যেতে হয় এখানকার ‘মাস্ট গো ডেস্টিনেশন’ দালাই লামার মন্দিরে। দালাই লামাও মাঝেমধ্যেই এখানে প্রকাশ্যে দেখা দেন। দিয়েছিলেন দু-এক দিন আগেও। বিশ্বকাপ কাভার করতে ম্যাকলয়েডগঞ্জ থেকে বেশ নিচে এবং আট কিলোমিটার দূরের হিমাচল প্রদেশ ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন (এইচপিসিএ) স্টেডিয়ামে যাওয়া-আসার পথে অল্পের জন্য তাঁর দেখা না পাওয়ার আফসোস নিয়েই এখান থেকে ফিরতে হচ্ছে।
ফেরার আগে এই শহরটি নিয়ে টানা উপসংহারটি ‘একের ভেতরে তিন’। এটি ভারতের শহর যেমন, তেমনি তিব্বতেরও। তবে এখানকার বিপণিবিতান থেকে শুরু করে রাস্তায় বসা অস্থায়ী দোকানে কাশ্মীরি শাল এবং পণ্যের সমাহারে কাশ্মীরকেও খুঁজে পাওয়া যায়। গাড়ি ভাড়া করে দর্শনীয় যেসব জায়গায় ঘুরতে যাবেন, তার একটি ম্যাকলয়েডগঞ্জের ডাল লেকও। জানেন তো নিশ্চয়ই যে কাশ্মীরের ডাল লেকে নৌকায় করে ঘুরে না বেড়ালে পর্যটক মন তৃপ্ত হয় না। এখানকার লেক খুব ছোট হলেও কাশ্মীর এখানে আছে। কাশ্মীরের শ্রীনগরও খুব দূরে নয় এখান থেকে। মেরেকেটে শচারেক কিলোমিটার হবে।
ধর্মশালার ম্যাকলয়েডগঞ্জ তাই একের ভেতর তিন শহরই!