আল্লামা আশরাফ আলী থানবি (রহ.)
মুমিন আল্লাহর রহমতের আশা করে। কোরআনে মুমিনদের আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হতে নিষেধ করা হয়েছে। আবার তাদের চেষ্টা করতেও বলা হয়েছে। তাই মুমিন শুধু আশার ওপর নির্ভর করে বসে থাকবে না।
আল্লামা ইবনুল কাইয়িম জাওযি (রহ.) বলেছেন, ‘পাপী মানুষের মনে আল্লাহর রহমতের আশা জন্মাতেই পারে না।
আল্লাহর ইবাদত ও আনুগত্যের জীবন ছাড়া তাঁর রহমত লাভের আশা আত্মপ্রবঞ্চনা ছাড়া আর কিছুই নয়। এমন ব্যক্তি সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মানুষ! নিশ্চয়ই আল্লাহর প্রতিশ্রুতি সত্য; সুতরাং পার্থিব জীবন যেন তোমাদের কিছুতেই প্রতারিত না করে এবং সেই প্রবঞ্চক যেন কিছুতেই আল্লাহ সম্পর্কে তোমাদের প্রবঞ্চিত না করে।’ (সুরা ফাতির, আয়াত : ৫)
মনে রাখতে হবে, আল্লাহ বড় দয়ালু ও দয়াশীল। দয়ার হাত প্রসারিত করে নিজের থেকে তা সংকুচিত করেন না। কিন্তু তা সত্ত্বেও তিনি কারো মুখাপেক্ষী নন।
বান্দা যদি হাত টেনে নেয়, তবে তিনিও হাত টেনে নেবেন। কেননা তিনি জবরদস্তি কারো মাথার ওপর নিয়ামতের বোঝা চাপিয়ে দেন না। তাঁর কোনো ঠেকা নেই যে বান্দা চাক বা না চাক তাকে দিতেই থাকবেন। মহান আল্লাহ যেমনটি বলেছেন, ‘আমি কি এ বিষয়ে তোমাদের বাধ্য করতে পারি, যখন তোমরা তা অপছন্দ করো?’ (সুরা হুদ, আয়াত : ২৮)
বহু হাদিসে এসেছে, কোনো ইবাদত শুরু করার পর তা ত্যাগ করলে বোঝা যায় যে বান্দা আল্লাহর রহমতের আশা ত্যাগ করেছে। কোনো ক্ষেত্রে আমল শুরু করার পর তা ছেড়ে দেওয়া মাকরুহের স্তরে পৌঁছে যায়। রাসুলুল্লাহ (সা.) এমন করতে নিষেধ করেছেন। আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস (রা.)-কে উদ্দেশ করে মহানবী (সা.) বলেন, ‘হে আবদুল্লাহ! তুমি অমুক ব্যক্তির মতো হয়ো না, সে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করত, অতঃপর তা ছেড়ে দিয়েছে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১১৫২)
হাদিসের ভাষ্য থেকে বোঝা যায়, আমল করে তা ছেড়ে দেওয়া রাসুলুল্লাহ (সা.) অপছন্দ করতেন। এই হাদিসের আলোকেই বিজ্ঞ আলেমরা বলেন, আমল শুরু করার পর তা ছেড়ে দেওয়া মাকরুহ। বান্দা আমল শুরু করার পর তা ছেড়ে দিলে আল্লাহও তার সঙ্গে অনুরূপ আচরণ করেন। যেমন—কোনো ব্যক্তি যদি প্রতিদিন কারো কাছে আসে এবং যার কাছে আসে সে তার সাক্ষাতে অভ্যস্ত থাকে। এরপর হঠাৎ যদি যাতায়াত বন্ধ করে দেয়, তবে দ্বিতীয় ব্যক্তি মনে কষ্ট পায়, তার প্রতি অসন্তুষ্ট হয়ে যায়। আল্লাহর বিষয়টিও অনুরূপ। হ্যাঁ, কোনো ব্যক্তি যদি শারীরিক অক্ষমতা ও অসুস্থতা বা শরিয়ত অনুমোদিত কোনো কারণে আমল ত্যাগ করে, তবে সেটা ভিন্ন কথা। অপারগ ব্যক্তির অন্তরে যদি আল্লাহর মহব্বত ও ভালোবাসায় কোনো ত্রুটি না থাকে, তার ইখলাস ও নিষ্ঠা বজায় থাকে তবে আল্লাহ তাকে পূর্ণ প্রতিদান দেবেন। যেমন—রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহর বান্দা যখন অসুস্থ হয় বা সফর করে তখন সুস্থ ও নিজ অবস্থানে থাকাকালীন যে পরিমাণ আমল করত, সে পরিমাণ আমলের সাওয়াব তার আমলনামায় লেখা হয়।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ২৯৯৬)
আল্লাহ সবাইকে নেক আমল ধারাবাহিকভাবে করার তাওফিক দিন। আমিন।
মাওয়ায়েজে আশরাফিয়া থেকে আলেমা হাবিবা আক্তারের ভাষান্তর