Saturday, December 7, 2024

সুযোগ কখনো কখনো দেখতে হয় কদাকার, ভীতিকর

অর্থভুবন প্রতিবেদক

আমার পরিচয় দিতে গিয়ে একটু আগে যা যা বলা হলো, তার সবটাই সত্যি। কিন্তু এর সবই সিভিতে দেওয়ার মতো, সত্যের ‘চকচকে’ অংশ।

যে অংশ তোমাদের অজানা, তা হলো আমি ক্লাস নাইনে ড্রপআউট হয়েছিলাম। হাইস্কুল ডিপ্লোমা নয়, আমার একটা জিইডি ডিগ্রি আছে। পেশাজীবন শুরু করেছিলাম গাড়ির মেকানিক হিসেবে, যেখানে টয়োটা ও ওল্ডসমোবাইলসের গাড়ি মেরামত করা ছিল আমার কাজ।

বয়স ৫০। তিন দশক ধরে আমি শুধু চকচকে সত্যটাই সবার সামনে বলে এসেছি। কিন্তু আমার স্ত্রী কিলার পরামর্শে একসময় আমি সত্যের তিক্ত অংশটুকুও বলা শুরু করলাম। অবাক করা বিষয় হলো, এর পর থেকেই শিক্ষার্থীরাও তাঁদের জীবনের চাকচিক্যহীন সত্যগুলো আমার সামনে অবলীলায় বলতে শুরু করল। এই সত্য তাদের সিভিতে থাকে না।

নিজের এবং শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে শোনা অভিজ্ঞতা থেকে আমি জানি, একাডেমিক চড়াই-উতরাই ছাড়াও তোমাদের ব্যক্তিগত জীবনে অনেক বাধাবিপত্তি আছে। হতে পারে সেটা পারিবারিক সমস্যা, মানসিক সমস্যা, আর্থিক সমস্যা, অধ্যাপক বা বসের সঙ্গে সমস্যা। অস্বাস্থ্যকর সম্পর্কও তোমাকে ভোগাতে পারে। হয়তো বন্ধুবান্ধব সবাই বলছে, ‘এবার এই সম্পর্ক থেকে বের হয়ে আয়’, কিন্তু তুমি কিছুতেই পারছ না। হ্যাঁ, এমন ঝামেলায় আমিও পড়েছিলাম!

মায়ের সেই দৃষ্টি

সুযোগ সব সময় ঢাকঢোল বাজিয়ে, আলো ছড়িয়ে আমাদের হাতে এসে ধরা দেয় না। কখনো কখনো সুযোগ দেখতে হয় কদাকার, ভীতিকর। এমন একটা সুযোগের কথাই তোমাদের বলব।

আমাদের পরিবারে পাঁচ সন্তানের মধ্যে আমি ছিলাম দ্বিতীয়। আমার বয়স যখন ১৩, মা আমাকে বাবার কাছে রেখে কাজে যেত। বাবা খুব নির্যাতন করত। খুব ভালো ছাত্র ছিলাম। কিন্তু পরিবারের এই অশান্তির কারণেই একসময় স্কুল ফাঁকি দিতে শুরু করলাম। ১৪ বছর বয়সে আমি ড্রপআউট হই। প্রতিদিন ক্লাসের নাম করে বের হতাম ঠিকই; কিন্তু…এটা সত্যি যে নিউ অরলিন্সে ভঙ্গ করার মতো খুব বেশি আইন নেই, তবে আমি কিছু না কিছু খুঁজে নিতাম।

মা বিভিন্ন অফিস পরিষ্কার করার কাজ করতেন। একটা দোকানের ক্যাশিয়ার ছিলেন। বাড়ি বাড়ি গিয়ে স্বাস্থ্যসেবাও দিতেন। ঘণ্টার পর ঘণ্টা পরিশ্রম করলেও কখনো তাঁকে কোনো অভিযোগ করতে শুনিনি। কিন্তু যেদিন প্রথম জানলেন, আমি স্কুল থেকে ড্রপআউট হয়েছি, সেদিনের দৃষ্টিটা আমি কখনো ভুলব না।

বিশ্ববিদ্যালয়ে পা

১৮ বছর বয়সে আমি জিইডি করার সিদ্ধান্ত নিই। কলেজে যেতে শুরু করি। নিজেই যেন নিজের টিউশন ফি জোগাড় করতে পারি, সে জন্য তখন একটা কারিগরি স্কুলে অটো মেকানিকের কাজ শিখতাম। একদিন একটা গাড়ি মেরামতের দোকানে কাজ করার সময় খবর পেলাম, টুলেন ইউনিভার্সিটির নাইট স্কুল প্রোগ্রামে কম্পিউটার ইনফরমেশন সিস্টেম বিষয়ে পড়ার সুযোগ আছে।

বাবা সাফ সাফ বলে দিলেন, ‘ডাক্তার ও আইনজীবীর ছেলেমেয়েরা যেখানে পড়ে, সেখানে আমি আমার ছেলেকে পাঠাব না। গিয়ে শুধু শুধু মুখ কালো করবে।’

কিন্তু মা আমার ওপর বিশ্বাস রেখেছিলেন। সুতরাং মা আর আমার সীমিত আয়ের ওপর ভরসা রেখেই ভর্তি হয়ে গেলাম।

সুযোগের গর্জন

টুলেন ইউনিভার্সিটিতে পড়ার সময় কম্পিউটার ল্যাবের এক কর্মী আমার কাজ দেখে খুব খুশি হলেন। আমাকে নিয়ে গেলেন কম্পিউটারবিজ্ঞান বিভাগের প্রধানের কাছে, চার বছরের প্রোগ্রামে ভর্তি করার আবদার নিয়ে। বিভাগীয় প্রধান আমার সনদগুলো দেখলেন, আবেদন করার উৎসাহ দিলেন, পরে আমার জন্য আংশিক বৃত্তির ব্যবস্থাও করলেন।

কিন্তু বিভাগীয় প্রধান শর্ত জুড়ে দিয়েছিলেন—হাইস্কুলের গণিতের যা যা আমি মিস করেছি, সব আগে শিখে আসতে হবে। বীজগণিত, ত্রিকোণমিতি, প্রিক্যালকুলাস…তালিকা অনেক লম্বা।

২১ বছর বয়সে মানুষ যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে সিনিয়র হয়ে যায়, আমি তখন হাইস্কুলের পড়া পড়তে শুরু করি। প্রকৌশলের প্রাথমিক বিদ্যা অর্জন, অটো মেকানিকের কাজ, সেসবও চলছিল একই সঙ্গে।

এই ঘটনাকে কিন্তু ‘সুযোগ দরজায় কড়া নাড়ছে’ বলা যায় না। বরং বলা যায়, সুযোগ সে সময় পিলে চমকানো গর্জনে রীতিমতো হুমকি দিচ্ছিল। হ্যাঁ, আমি ভীত ছিলাম। প্রতিনিয়ত মনে হতো, আমাকে দিয়ে হবে না। আমি পারব না। কিন্তু আমি চেষ্টা চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিই।

পরের দুই বছর খুব কঠিন ছিল। শুধু পড়ালেখা আর কাজের চাপের জন্যই নয়। নিউ অরলিন্স আমার খুব চেনা হলেও টুলেন আমার কাছে ছিল ‘বিদেশ’-এর মতো। অধ্যাপক যখন লেকচার দিতেন, আমি বুঝতাম না, শব্দগুলো সব টুকে রাখতে হতো। পরে বাড়ি গিয়ে সেসবের অর্থ খুঁজতাম।

প্রতিদিন হাল ছেড়ে দেওয়ার কথা ভাবতাম। কিন্তু ২৪ বছর বয়সে আমি স্নাতক ডিগ্রি নিই।

প্রিয় শিক্ষার্থীরা, সুযোগ যখন তোমাকে ভয় দেখাবে, যখন তোমার সামনে গর্জন করবে, মনে হবে এটা অসম্ভব, বুঝবে সেই সুযোগই তোমাকে ঠিক পথে নেবে। সেই সুযোগই তোমার সামনে সৌভাগ্যের দরজা খুলে দেবে।

সূত্র: ইউনিভার্সিটি অব ফ্লোরিডার ওয়েবসাইট

spot_imgspot_img

ছবিটা তুলে রাখুন ঐতিহাসিক হয়ে থাকবে : ড. ইউনূস

গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক-কর্মচারীদের কল্যাণ তহবিলের ২৫ কোটি টাকা আত্মসাৎ এবং পাচারের অভিযোগে করা মামলায় জামিন পেয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান ও নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস।...

মায়ের ঘুমপাড়ানি সুর শান্তিধারা

আমাদের জোনাকজ্বলা গ্রাম বিদ্যুৎ তখনও দেখেনি। সন্ধ্যার কাছে বিকেল নতজানু হতেই সবুজ পাহাড়েরা মিশকালো হয়ে যায়। ফলে- আমরা চালের ফুটো দিয়ে চাঁদ দেখি, আর...

মাহবুবা ফারজানা নতুন তথ্য সচিব

তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের নতুন সচিব হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন বেগম মাহবুবা ফারজানা। তিনি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) ছিলেন। তাকে সচিব পদে পদোন্নতি...

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here