অর্থভুবন প্রতিবেদক
সূর্য তখন উঁকি দিচ্ছে পুব আকাশে। কেউ বের হয়েছে প্রাতর্ভ্রমণে, কেউ বা কর্মস্থলের উদ্দেশে। এর মধ্যেই বিভিন্ন গাছ, ভবনের ছাদ ও বৈদ্যুতিক তারে সারি সারি গাঙশালিকের অপেক্ষা। গামছা কাঁধে হাঁটতে হাঁটতে দোকানে এলেন একজন।
এই দৃশ্য প্রতিদিন ভোরে দেখা যায় ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার গাড়াগঞ্জ বাজারে।
মিলন জানান, তিন ভাইয়ের মধ্যে সবার বড় মিলন। বাবা ছিলেন বর্গাচাষি। নুন আনতে পান্তা ফুরাত সংসারে। অভাবের কারণে স্কুলের গণ্ডি পেরোতে পারেননি। বাবার সঙ্গে ফসলের মাঠে ছুটতে হতো। গরুও পালতেন। একসময় চাষবাস ছেড়ে বাড়ি বাড়ি থেকে দুধ কিনে জেলা সদরে নিয়ে বিক্রি করতেন। পরে ভাবলেন, মিষ্টির দোকান দেবেন। সেটা ২০০১ সালের কথা। গাড়াগঞ্জ বাজারে ছোট্ট একটা দোকান ভাড়া নিয়ে দই-মিষ্টি ও নিমকি বিক্রি শুরু করলেন মিলন। দ্রুত তাঁর দই-মিষ্টির সুনাম ছড়িয়ে পড়ল। কয়েক বছরের মধ্যেই ছোট্ট সেই দোকানের পরিসর বেড়েছে।
বৃত্তিরানীনগর গ্রামের বাসিন্দা মিলনের বয়স এখন পঞ্চাশের ঘরে। পাখির প্রতি ভালোবাসা ছেলেবেলা থেকেই। শৈশবে একবার একটা টিয়াও পুষতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর বাবা বলেছিলেন, ‘পাখিকে কখনো খাঁচায় বন্দি করবে না। তোমাকে যদি শিকল দিয়ে বেঁধে রাখি, কেমন লাগবে?’ তাই আর পাখি পোষা হয়নি তাঁর। তবে বাবার কথাটা মনে রেখেছেন। বন্ধুদের অনেকে তখন ফাঁদ পেতে বক, ডাহুক ইত্যাদি শিকার করতেন। মিলন কখনো সেই পথ মাড়াননি। সুযোগ পেলে কুকুর, বিড়ালকেও খাওয়াতেন।
দোকান দেওয়ার পর শুরুর দিকে মিলন দেখতেন, একঝাঁক পাখি আশপাশের গাছপালায়, বৈদ্যুতিক তারে এমনকি তাঁর দোকানঘরের টিনের ওপর বসে আছে। দোকান খোলার সময় এরা কিচিরমিচির শব্দ করত। প্রথম কয়েক দিন উপেক্ষা করেছিলেন। কিন্তু একদিন সকালে পাখির সেই কিচিরমিচির আওয়াজ শুনে মিলনের মনে হলো, এই শব্দ যেন ক্ষুধার্ত পাখিদের এক ধরনের আর্তনাদ। তখন তিনি নিজের খাওয়ার জন্য আনা মুড়ি-চানাচুর ছিটিয়ে দিলেন সামনের খোলা জায়গায়। আর অমনি চারদিক থেকে পাখি এসে তা খেতে শুরু করল। এই দৃশ্য দেখে মন ভরল মিলনের। পরের দিনও একই কাজ করলেন তিনি। এভাবে একসময় পাখিকে খাবার দেওয়া রুটিনে পরিণত হলো তাঁর। ২২ বছর আগে সেই যে শুরু করেছেন এখনো তা বিরামহীনভাবে চলছে।