অর্থভুবন প্রতিবেদক
কুমিল্লা একটি প্রবাসী অধ্যুষিত জেলা। জনশক্তি রপ্তানি এবং বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে প্রশংসনীয় ভূমিকা পালন করছেন জেলার প্রবাসীরা। গত ১৭ বছরের বেশি সময় ধরে জনশক্তি রপ্তানিতে এগিয়ে রয়েছে জেলাটি। প্রতি বছর কাজ নিয়ে দেশের বাইরে যাওয়া মোট জনশক্তির অন্তত ১০ শতাংশই এই জেলার বাসিন্দা।
জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি) এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বিশ্লেষণে এ তথ্য চিত্র উঠে এসেছে।
এদিকে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সে জেলার অর্থনীতি এবং অবকাঠামোর আমুল পরিবর্তন হলেও নাগরিক সেবা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছে অধিকাংশ প্রবাসী এবং তাদের পরিবার। তাছাড়া যথাযথ সচেতনতার অভাবে বেশিরভাগ প্রবাসীর রেমিট্যান্স আসছে হুন্ডি চ্যানেলে।
জানা গেছে, দীর্ঘ বছর যাবত কুমিল্লা জেলার বাসিন্দাদের একটি অংশ বিদেশমুখী। গত দুই যুগের বেশি সময় ধরে পরিবারের সচ্ছলতা এবং দেশের অর্থনীতি সমৃদ্ধ করতে একশ্রেণীর যুবকরা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শ্রম দিচ্ছেন। সম্প্রতি শিক্ষিত যুব সমাজের অনেকেই বিদেশে পাড়ি দিচ্ছে। এতে অর্থনীতি এবং অবকাঠামোর চিত্র বদলেছে। বিশেষ করে আবাসন খাতের উন্নয়নে প্রবাসীরা বেশি ভূমিকা পালন করছে।
জেলা জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো জানায়,২০০৫ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন দেশে প্রায় ৯১ লাখ ৯২ হাজার বাংলাদেশির কর্মসংস্থান হয়েছে। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ৯ লাখ ৬৪ হাজার প্রবাসী গেছেন কুমিল্লা জেলা থেকে।
তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে থাকা চট্টগ্রাম থেকে গেছেন ৭ লাখ ২৬ হাজার মানুষ। ২০২১ সালে বিদেশ যান ৬ লাখ ১৭ হাজার ২০৯ জন। কুমিল্লা থেকেই যান সর্বোচ্চ ৬৮ হাজার ১৬৭ জন। ২০২২ সালে মোট বিদেশ যান ১১ লাখ ৩৫ হাজার ৮৭৩ জন। শুধু কুমিল্লা থেকে যান ১ লাখ ৫ হাজার ৯৯৭ জন, যা মোট কর্মসংস্থান হওয়া বাংলাদেশির ৯.৩৩ শতাংশ।
ঢাকা জেলা থেকে যান মাত্র ৩৪ হাজার ৩৮৭ জন, যা কর্মসংস্থান হওয়া মোট বাংলাদেশির ৩ শতাংশের সামান্য বেশি। চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে বিদেশে গেছেন ৬ লাখ ১৭ হাজার ৫৭৬ জন। কুমিল্লা থেকে গেছেন সর্বোচ্চ ৫১ হাজার ২৭ জন।
দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা চট্টগ্রাম থেকে গেছেন ৩০ হাজার ৭৮৭ জন। সেখানে ঢাকা জেলা থেকে গেছেন ১৬ হাজার ৩৩৪ জন। তবে প্রয়োজনীয় সচেতনতার অভাবে জেলার বেশিরভাগ প্রবাসীদের রেমিট্যান্স আসছে অবৈধ হুন্ডি চ্যানেলে। তাছাড়া নানা জটিলতার কারণে বাধ্য হয়েই অনেকে হুন্ডির পথ বেছে নিচ্ছে।
এ ব্যাপারে একাধিক ব্যাংক কর্মকর্তা জানান, প্রবাসীদের বড় অংশ হুন্ডির মাধ্যমে গ্রামের বাড়িতে টাকা পাঠাচ্ছে। এই টাকাগুলো ব্যাংকিং চ্যানেলে ঢুকছে না। অন্যদিকে হুন্ডি তৎপরতা ও অর্থ পাচারে যুক্ত শীর্ষ ব্যক্তিরা ঢাকায় বসেই নেটওয়ার্ক নিয়ন্ত্রণ করেন।
এদিকে দেশের অর্থনীতিসহ সামাজিক নানা উন্নয়নমূলক কার্যক্রমে প্রবাসীদের অবদান থাকলেও নাগরিক সেবায় ঘাটে ঘাটে হয়রানির শিকার হন বলে অভিযোগ অনেকের।
সৌদি আরব প্রবাসী জেলার দেবিদ্বার উপজেলার ফতেহাবাদ এলাকার বাসিন্দা আবুল কালাম বলেন, অর্থনীতিতে আমরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করলেও নাগরিক সেবার ক্ষেত্রে আমরা সব সেক্টরেই অবহেলিত। সেবা মূলক সব সেক্টরে প্রবাসী ডেস্ক খুলতে আহ্বান জানান তিনি।
এ বিষয়ে কুমিল্লা জেলা জনশক্তি ও কর্মসংস্থান ব্যুরো অফিসের উপ-পরিচালক দেবব্রত ঘোষ বলেন, জনশক্তি রপ্তানিতে টানা ১৭ বছর যাবত শীর্ষে রয়েছে কুমিল্লা। আমরা হুন্ডি পরিহার করে ব্যাংক চ্যানেলে রেমিট্যান্স প্রেরণের জন্য প্রবাসী ভাইদেরকে সচেতন করে যাচ্ছি।