প্রতিদিন সূর্যোদয়ের আগে ঘুম থেকে উঠেন গাজার বাসিন্দা জামিল আল-কারৌবি (৩৪)। এরপর পারিবারিক কিছু কাজ সেড়েই প্রতিবেশীদের সাহায্যে বের হয়ে যান তিনি ও তার গাধা আমন্ড। ইসরাইল অঞ্চলটিতে পানি, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়ার পর এখন গাজাবাসীর তৃষ্ণা মেটাচ্ছে জামিলের গাধা। টানা গাড়িতে প্রতিবেশীদের ঘরে ঘরে সরবরাহ করছে বিশুদ্ধ খাবার পানি। ইসরাইলের হামলার পর গত ৯ দিনে এটি এখন জামিলের নতুন দৈনন্দিন রুটিনে পরিণত হয়েছে। আলজাজিরা। যুদ্ধ শুরুর আগে এই গাড়িতে করে সবজি বিক্রি করতেন জামিল। তিনি বলেন, ‘আমি আমার বন্ধু আমন্ডের সঙ্গে একটি চুক্তি করেছি। যদি সে প্রতিদিন ভোরে ঘুম থেকে উঠে আমাকে পানির ট্যাঙ্ক পূরণ করতে এবং তা আশপাশের বাসিন্দাদের কাছে বিতরণ করতে সাহায্য করে তাহলে আমি তাকে প্রতিদিন এক ব্যাগ অতিরিক্ত খাবার দেব।’ বাবার মৃত্যুর পর উত্তরাধিকার সূত্রে একটি কূপ পেয়েছিলেন জামিল। বর্তমানে এই কূপ থেকেই পরিবারের পানির চাহিদা পূরণের আগে দুটি বড় ট্যাঙ্ক ভর্তি করেন তিনি। বিতরণ করেন আশপাশের বাসিন্দাদের কাছে। তবে তিনি পানির জন্য গ্রহণ করেন না কোনো অর্থ। জামিল বলেন, ‘আমি পানি বিক্রি করি না। বিনা মূল্যে বিতরণ করি। আমি যদি আমার প্রতিবেশীদের সাহায্য না করি তাহলে তাদের কে সাহায্য করবে? ইসরাইল? আমি এই দেশকে সন্দেহ করি।’ জামিলের এক প্রতিবেশী জানান, পানি অত্যাবশ্যক ছিল। ইন্টারনেট আর বিদ্যুৎ ছাড়া হয়তো বাঁচা যায়। কিন্তু পানি ছাড়া নয়।’ প্রতিবেশীরা আরও জানান, ‘জামিল না থাকলে আমরা কী করতাম তা জানি না। আমরা পানি আনার জন্য সাহায্য সংস্থাগুলোর কাছে যাওয়ার চেষ্টা করেছি। কিন্তু সেখানে খুব ভিড়। আর সেখানকার পানিও পরিষ্কার নয়।’
জামিল বলেছেন, তিনি আরও বেশি মানুষকে সাহায্য করার জন্য তার অঞ্চলের বাইরেও যেতে চেয়েছেন। কিন্তু রাস্তায় রাস্তায় ইসরাইলের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার ধ্বংসস্তূপ থাকার কারণে গাড়ি নিয়ে অঞ্চলগুলোতে পৌঁছানো সম্ভব না।’ জামিলের কনিষ্ঠ পুত্র ওসামা জানায়, ‘আমার বাবা সবচেয়ে সুখ ও গর্ববোধ করেন যখন সাধারণ মানুষ তাদের তৃষ্ণা মিটিয়ে ঘুমাতে যান।’ গাধায় টানা গাড়িতে করে জামিল তার পরিবারের প্রয়োজনের অতিরিক্ত কিছু জিনিসি যেমন নিজেদের বাগানের লেবু, আলু বিতরণ করেন। গাজার প্রায় সব বাসিন্দাই এখন পানির অভাবে ভুগছেন। বিবিসিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এক বাসিন্দা বলেন, ‘আমি পাঁচ থেকে ছয়টি সুপারমার্কেটে গিয়ে পানি কেনার চেষ্টা করেছি. কিন্তু আমি পানির বোতল খুঁজে পাইনি। আজকে আমাকে রাফাহ পর্যন্ত প্রায় ১০ কিলোমিটার যেতে হয়েছে শুধু দুই থেকে তিন বোতল পানির জন্য।’ পানির এই সংকট থেকে বাঁচতে বাসিন্দারা কূপ খনন করছেন নিজেরাই। গাজার এক বাসিন্দা ইসলামিক ত্রাণ সহায়তাকর্মী বলেন, তিনি ও তার পরিবার খাবার পানি খুঁজে পাচ্ছেন না। তিনি যে ভবনে থাকের তার বাসিন্দারা নিজস্ব পানির কূপ খনন করেছেন।