পৃথিবীর ইতিহাসে ইসলাম একমাত্র ধর্ম, যার যাত্রা শুরু হয়েছিল ‘ইকরা’ তথা পড়ো বাক্যের মাধ্যমে। অর্থাৎ ইসলাম তার সূচনা থেকেই মানুষকে জ্ঞানচর্চায় উৎসাহিত করে আসছে; বরং বলা যায়, ইসলাম জ্ঞানচর্চাকে দ্বিনচর্চার অংশ বলে ঘোষণা করেছে। পবিত্র কোরআনে জ্ঞান ও প্রজ্ঞার চর্চাকে নবী-রাসুলদের অন্যতম প্রধান দায়িত্ব বলা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘তিনিই উম্মিদের মধ্যে একজন রাসুল পাঠিয়েছেন তাদের মধ্য থেকে, যে তাদের কাছে আবৃত্তি করে তাঁর আয়াতগুলো; তাদেরকে পবিত্র করে এবং শিক্ষা দেয় কিতাব ও হিকমত; ইতিপূর্বে তো তারা ছিল ঘোর বিভ্রান্তিতে।
জ্ঞানপ্রচারে ইসলামের অনুপ্রেরণা
জ্ঞানের প্রচার ও প্রসারে ইসলাম একাধিক নির্দেশ ও নির্দেশনা দিয়েছে। যার কয়েকটি তুলে ধরা হলো—
১. জ্ঞানার্জন ফরজ : জ্ঞানচর্চায় উৎসাহিত করতে ইসলাম জ্ঞানার্জনকে ফরজ করেছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, জ্ঞানার্জন করা প্রত্যেক মুসলিমের ওপর ফরজ। (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস : ২২৪)
২. জ্ঞান বিতরণ জ্ঞানীর দায়িত্ব : আল্লাহ যাকে জ্ঞান দান করেছেন, তার দায়িত্ব জ্ঞান বিতরণ করা।পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তাদের প্রত্যেক দলের এক অংশ বহির্গত হয় না কেন, যাতে তারা দ্বিন সম্পর্কে জ্ঞানানুশীলন করতে পারে এবং তাদের সম্প্রদায়কে সতর্ক করতে পারে, যখন তারা তাদের কাছে ফিরে আসবে, যাতে তারা সতর্ক হয়।’ (সুরা : তাওবা, হাদিস : ১২২)
৩. জ্ঞান গোপন করা পাপ : জ্ঞানী ব্যক্তির জন্য অর্জিত জ্ঞান গোপন করা পাপ। একইভাবে তাকে অর্থ উপার্জনের মাধ্যম বানানো নিষিদ্ধ। মহান আল্লাহ বলেন, ‘স্মরণ করো, যাদেরকে কিতাব দেওয়া হয়েছিল আল্লাহ তাদের প্রতিশ্রুতি নিয়েছেন, তোমরা তা মানুষের কাছে স্পষ্টভাবে প্রকাশ করবে এবং তা গোপন করবে না।
রাসুলে আকরাম (সা.) বলেছেন, কাউকে যদি জ্ঞান সম্পর্কিত কিছু জিজ্ঞাসা করা হয় এবং সে জানা সত্ত্বেও তা গোপন রাখে, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাকে আগুনের লাগাম পরাবেন। (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস : ৩৬৫৮)
৪. অনুপস্থিতদের কাছে পৌঁছে দিতে হবে : ইসলাম শুধু উপস্থিত ব্যক্তির মতো অনুপস্থিত ব্যক্তির কাছেও জ্ঞানের বার্তা পৌঁছে দিতে বলেছে। বিদায় হজের ভাষণে নবীজি (সা.) বলেন, সাবধান! তোমাদের উপস্থিত ব্যক্তিরা অবশ্যই অনুপস্থিত ব্যক্তিদের কাছে আমার এ কথা পৌঁছে দেবে। এখানকার উপস্থিত ব্যক্তিরা যাদের কাছে আমার কথা পৌঁছাবে, তারা হয়তো উপস্থিত শ্রোতাদের চেয়ে অধিকতর সংরক্ষণকারী হবে। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৬৭)
৫. জ্ঞান আল্লাহভীতি অর্জনের মাধ্যম : জ্ঞানার্জনের মাধ্যমে ব্যক্তি আল্লাহভীরু হয়।
এ ছাড়া জ্ঞানচর্চার ওপর নির্ভর করে ব্যক্তির ধর্মীয় ও পার্থিব জীবনের সাফল্য। বিশেষত ধর্মীয় জ্ঞান না থাকলে ব্যক্তির পক্ষে সঠিকভাবে দ্বিন পালন করা সম্ভব নয়। ওমর ইবনে আবদুল আজিজ (রহ.) বলেছেন, যে ব্যক্তি তার কথাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না, সে বেশির ভাগ সময় ভুল করে। আর যে ব্যক্তি ইলম ছাড়া কোনো আমল করে, তা কল্যাণের চেয়ে বেশি অকল্যাণই বয়ে আনে। (শুআবুল ঈমান লিল-বাইহাকি, ইলম অধ্যায়)
আল্লাহ সবাইকে জ্ঞানের প্রচার-প্রসারে অংশীদার করুন। আমিন।