ডলারের উচ্চমূল্য পুরো দেশের অর্থনীতিকে গ্রাস করছে। তীব্র ডলার সংকটের কারণে টাকার ধারাবাহিক অবমূল্যায়নে ব্যবসা-বাণিজ্য বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়েছে। ২০২২-২৩ হিসাব বছরে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ডরিন পাওয়ার জেনারেশনস অ্যান্ড সিস্টেমস লিমিটেডের মুদ্রা বিনিময় হারে ১১২ কোটি টাকা লোকসান হয়েছে। এর ফলে উল্লিখিত হিসাব বছরে কোম্পানিটির নিট মুনাফা ৬১ শতাংশ কমে গেছে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্রে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
২০২২-২৩ হিসাব বছরে ডরিন পাওয়ারের নিট মুনাফা হয়েছে ৬৪ কোটি ৮০ লাখ টাকা, যা আগের হিসাব বছরে ছিল ১৬৬ কোটি ৭৯ লাখ টাকা। কোম্পানিটির আর্থিক ব্যয় অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যাওয়া নিট মুনাফা কমে যাওয়ার প্রধান কারণ বলে জানিয়েছে কোম্পানিটি। আর্থিক ব্যয়বৃদ্ধির প্রধান কারণ হচ্ছে ডলারের মূল্যবৃদ্ধির কারণে বিনিময় হারে বড় ক্ষতি। গতকাল ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জকে (ডিএসই) ডরিন পাওয়ার জানিয়েছে, বিদেশি মুদ্রা বিনিময় হারে সাবসিডিয়ারি কোম্পানিগুলোর বড় লোকসানের কারণে মূল কোম্পানির মুনাফা কমে গেছে। মার্কিন ডলারের বিপরীতে টাকার বড় অঙ্কের অবমূল্যায়ন ২০২২-২৩ হিসাব বছরে বিনিময় হারে লোকসান বেড়েছে প্রায় ৬৩ কোটি টাকা। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর দেশে ডলারের তীব্র সংকটের কারণে উল্লিখিত হিসাব বছরে টাকার অবমূল্যায়ন হয়েছে ১৬ শতাংশের বেশি। এ হিসাব শুধু বাংলাদেশ ব্যাংকের। তবে আমদানি ঋণপত্রে আরও বেশি দরে ডলার কিনতে হয়েছে আমদানিকারকদের।
মুনাফা কমে যাওয়া প্রসঙ্গে ডরিন পাওয়ার জেনারেশনস অ্যান্ড সিস্টেমস লিমিটেডের কোম্পানি সচিব মুহাম্মদ আমজাদ শাকিল বলেন, মূলত আর্থিক ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় নিট মুনাফায় প্রভাব ফেলেছে। বিনিময় হারের লোকসান ও সুদ ব্যয় বৃদ্ধির কারণে ২০২২-২৩ হিসাব বছরে কোম্পানির আর্থিক ব্যয় ১৫০ শতাংশের বেশি বেড়েছে। এরমধ্যে মুদ্রা বিনিময় হারের লোকসান বেশি প্রভাব ফেলেছে। অবশ্য আগামীতে ডলারের মূল্য স্থির থাকলে এ ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া যাবে বলে মনে করেন তিনি।
কোম্পানি সূত্রে জানা গেছে, নতুন একটি পাওয়ার প্লান্ট উৎপাদনে আসায় ২০২২-২৩ হিসাব বছরে ডরিন পাওয়ারের রেভিনিউ আগের বছরের তুলনায় ২২ দশমিক ৫ শতাংশ বেড়েছে। এ সময় কোম্পানিটির সমন্বিত আয় হয়েছে ১ হাজার ৮৪০ কোটি টাকা, যা ২০২১-২২ হিসাব বছরে ছিল ১ হাজার ৫০২ কোটি টাকা। তবে আয় বাড়লেও আর্থিক ব্যয় উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পাওয়ায় কোম্পানির মুনাফা কমে গেছে।
২০২২-২৩ হিসাব বছরে কোম্পানিটির আর্থিক ব্যয় দাঁড়িয়েছে ২৮০ কোটি টাকা, যা আগের হিসাব বছরে ছিল ১১১ কোটি টাকা। কোম্পানি সূত্র জানিয়েছে, আর্থিক ব্যয়ের মধ্যে বিনিময় হারের লোকসানের পরিমাণ ছিল ৪০ শতাংশ বা ১১২ কোটি টাকা। ২০২১-২২ হিসাব বছরে বিনিময় হারে লোকসানের পরিমাণ ছিল ৪৯ কোটি টাকা। ২০২২-২৩ হিসাব বছরের আর্থিক খাতের বাকি অর্থ ব্যয় করা হয়েছে ঋণের সুদ পরিশোধে।
এ সময় লভ্যাংশে কর্মীর মুনাফা ও কর পরিশোধের পর ডরিন পাওয়ারের নিট মুনাফা দাঁড়িয়েছে ৬৪ কোটি ৮০ লাখ টাকা। শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) দাঁড়িয়েছে ৩ টাকা ৫৬ পয়সায়, যা আগের হিসাব বছরে ছিল ৯ টাকা ২১ পয়সা। নিট মুনাফা কমে যাওয়ায় কোম্পানির ঘোষিত লভ্যাংশও কমে গেছে। গত বৃহস্পতিবার ডরিন পাওয়ারের পরিচালনা পর্ষদ ২০২২-২৩ হিসাব বছরের জন্য ১১ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। শুধুমাত্র সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের জন্য এ লভ্যাংশ ঘোষণা করা হয়েছে। কোম্পানির উদ্যোক্তা-পরিচালকরা কোনো লভ্যাংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আগের হিসাব বছরে নগদ ও বোনাস মিলিয়ে শেয়ারহোল্ডারদের জন্য মোট ৩০ শতাংশ লভ্যাংশ দিয়েছিল কোম্পানিটি।
লভ্যাংশ ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেনে কোনো সার্কিট ব্রেকার ছিল না। তারপরও শেয়ারটির দরে কোনো পরিবর্তন আসেনি। কোম্পানিটির শেয়ার দর দীর্ঘদিন ধরেই ৬১ টাকা ফ্লোর প্রাইসে পড়ে আছে। ডিএসইতে মাত্র ২৪টি শেয়ার লেনদেন হয়েছে। বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) কাছ থেকে বকেয়া পাওনা পাওয়ায় ২০২২-২৩ হিসাব বছরে কোম্পানিটির নগদ প্রবাহ ইতিবাচক হয়েছে। এ সময় শেয়ারপ্রতি সমন্বিত নিট নগদ প্রবাহ দাঁড়িয়েছে ১৭ টাকা ৯৮ পয়সা, যা আগের হিসাব বছরে ছিল ঋণাত্মক ২৮ টাকা ৭৭ পয়সা।
২০১৬ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয় বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী কোম্পানি ডরিন পাওয়ার জেনারেশনস অ্যান্ড সিস্টেমস লিমিটেড। কোম্পানিটির পরিশোধিত মূলধন হচ্ছে ১৮১ কোটি ১২ লাখ টাকা। মোট শেয়ারের ৬১ দশমিক ৬১ শতাংশ রয়েছে উদোক্তা-পরিচালকদের হাতে।