ইসলামী ডেস্ক, অর্থভুবন
মহান আল্লাহ মানুষকে সর্বোত্তম আকৃতি দান করেছেন। সুন্দর চেহারা দিয়েছেন। পবিত্র কোরআনে এসেছে, ‘আমি মানুষকে উৎকৃষ্ট অবয়বে সৃষ্টি করেছি।’
(সুরা : ত্বিন, আয়াত : ৪)
মানুষের বিচিত্র অবয়ব আল্লাহর কুদরতের নিদর্শনও বটে।
এ প্রসঙ্গে আবু মুসা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) ইরশাদ করেন, আল্লাহ তাআলা আদম (আ.)-কে এক মুষ্টি মাটি দ্বারা সৃষ্টি করেছেন, যা তিনি পৃথিবীর বিভিন্ন জমিন থেকে সংগ্রহ করেছিলেন। এ হিসেবেই আদম (আ.)-এর সন্তানদের রূপ ও রং বিভিন্ন রকম হয়েছে।
চেহারা নিয়ে অবজ্ঞা নিষিদ্ধ
চেহারা মানবদেহের প্রধান একটি অঙ্গ। সুন্দর চেহারায় প্রশংসায় সবাই খুশি হয়।
চেহারায় আঘাত করা নিষিদ্ধ
আল্লাহ মানুষের চেহারা আকর্ষণীয় ও সম্মানিত করেছেন। ইসলামী শরিয়ত চেহারায় আঘাত করা নিষিদ্ধ করেছে।
(আবু দাউদ, হাদিস : ২১৪২)
এমনকি শিশুদের শাসন করা সময়ও চেহারায় আঘাত করা নিষিদ্ধ। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যখন তোমাদের কেউ অন্য কাউকে শাস্তি প্রদান করে, তখন সে যেন তার চেহারায় আঘাত না করে। (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৪৯৩)
যুদ্ধক্ষেত্রেও চেহারায় আঘাত নয়
ইসলাম সাধারণ অবস্থার মতো যুদ্ধক্ষেত্রেও চেহারায় আঘাত করতে নিষেধ করেছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, তোমাদের মধ্যে কেউ যখন যুদ্ধ করবে, তখন সে যেন মুখমণ্ডলে আঘাত করা থেকে বিরত থাকে। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ২৫৫৯)
সৌন্দর্য বর্ধনে চেহারায় পরিবর্তন
শরীর আল্লাহর দেওয়া একটি আমানত। তাতে পরিবর্তন ও পরিবর্ধনের অধিকার মানুষের নেই। তাই নিছক সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য মানুষের চেহারা পরিবর্তন করা বৈধ নয়। তবে বিশেষ প্রয়োজনে চেহারায় সার্জারি করা জায়েজ আছে। আবদুর রহমান বিন তুরফা (রহ.) বলেন, কিলাবের যুদ্ধের সময় তাঁর দাদা আরফাজা বিন আসাদ (রা.)-এর নাক কাটা যায়। তিনি একটি রুপার নাক তৈরি করে নিলে তা থেকে দুর্গন্ধ আসতে থাকে। তখন তিনি নবী করিম (সা.)-এর নির্দেশে একটি সোনার নাক তৈরি করে নেন। (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ৪২৩২)
হাদিস থেকে বোঝা যায়, আগুনে পোড়া, এসিড দগ্ধ হওয়া কিংবা অ্যাক্সিডেন্টে চেহারা ক্ষতিগ্রস্ত হলে প্লাস্টিক সার্জারির মাধ্যমে স্বাভাবিক করার অবকাশ আছে।
চেহারা পর্দার অন্তর্ভুক্ত
নারীদের চেহারা পর্দার অন্তর্ভুক্ত। মহান আল্লাহ বলেন, ‘হে নবী! আপনার স্ত্রীদের, কন্যাদের এবং মুমিন মহিলাদেরকে বলে দিন, তারা যেন তাদের চাদরের এক অংশ তাদের ওপর ঝুলিয়ে দেয়। এটা সর্বাধিক সঠিক নিয়ম। যাতে তাদের চিনে নেওয়া যায় এবং তাদেরকে কষ্ট দেওয়া না হয়। আল্লাহ ক্ষমাশীল ও মেহেরবান।’
(সুরা : আল আহজাব, আয়াত : ৫৯)
আল্লাহ সুরা নুরে (৩০ ও ৩২ আয়াতে) নারী-পুরুষ উভয়কে দৃষ্টি নত রেখে চলার বিধান দিয়েছেন। আয়াতদ্বয়ে চোখ ও যৌনাঙ্গ হেফাজতের ব্যাপারে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কেননা চোখের দৃষ্টির লাগামহীনতা বেশির ভাগ অশ্লীলতার প্রধান উৎস। তবে অনিচ্ছাকৃত হঠাৎ দৃষ্টির ব্যাপারে শরিয়তে ছাড় রয়েছে। আলী (রা.) রাসুল (সা.)-কে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করেন। রাসুল (সা.) বলেন, হে আলী! অনাকাঙ্ক্ষিত দৃষ্টি পড়ে গেলে পুনরায় তুমি দৃষ্টি দিয়ো না। কেননা প্রথম দৃষ্টি তোমার জন্য ক্ষমাযোগ্য, কিন্তু পুনরায় দৃষ্টিপাত করা তোমার জন্য ক্ষমাযোগ্য নয়। (তিরমিজি, হাদিস : ২৭৭৭)
চেহারা সুন্দর করার আমল
ঈমান আমলের ভেতরগত সৌন্দর্য অনেক সময় বাইরে প্রকাশ পায়। চেহারার লাবণ্য বাড়ে। তাই অধিক আমল পার্শ্ব চেহারা সুন্দর করার স্থায়ী আমল। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ঈমানের অঙ্গ। আর সাজগোজ নারীদের স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য। স্বামী-স্ত্রীর পরস্পর পরস্পরের জন্য পরিপাটি থাকাই ইসলামের শিক্ষা। এ ব্যাপারে নবীজি (সা.) বলেন, আমি আমার স্ত্রীদের জন্য এমনই পরিপাটি থাকা পছন্দ করি, যেমন আমি তাদের ক্ষেত্রে সাজগোজ করে থাকতে পছন্দ করি। (বায়হাকি, হাদিস : ১৪৭২৮)
বাহ্যিক সাজসজ্জা করার সময় বা আয়না দেখার সময় এই দোয়াটি পাঠ করা উত্তম। আয়েশা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলতেন, আল্লাহুম্মা আহসানতা খালকি ফা আহসিন খুলুকি। হে আল্লাহ! আপনি আমার চেহারা সুন্দর করেছেন। অতএব, আমার চরিত্রও সুন্দর করে দিন। (মুসনাদে আবু ইআলা, হাদিস : ৫০৭৫)
আল্লাহ পরকালে সবার চেহারা উজ্জ্বল করুন। আমিন।