গবেষক ও লেখক মহিউদ্দিন আহমদের সাম্প্রতিক গ্রন্থ ‘জামায়াতে ইসলামী: উত্থান বিপর্যয় পুনরুত্থান’। তাঁর গ্রন্থ তালিকায় দৃষ্টি দিলেই এটা স্পষ্ট হয়ে যায় য়ে রাজনীতি তাঁর গবেষণা ও লেখালেখির মুখ্য বিষয়। তাঁর প্রকাশিত বইয়ের মধ্যে আছে ‘জাসদের রাজনীতি : অস্থির সময়ের রাজনীতি’, ‘এই দেশে একদিন যুদ্ধ হয়েছিল’, ‘বিএনপি : সময়-অসময়’, ‘বেলা-অবেলা : বাংলাদেশ ১৯৭২-১৯৭৫’, ‘এক-এগারো : বাংলাদেশ ২০০৭-২০০৮’, ‘লালসন্ত্রাস : সিরাজ সিকদার ও সর্বহারা রাজনীতি’, ‘প্রতিনায়ক সিরাজুল আলম খান’ ইত্যাদি।
মহিউদ্দিন আহমদের লেখায় যে বিষয়টি পাঠকের দৃষ্টি কাড়ে, সেটি হচ্ছে, রাজনীতি নিয়ে লিখলেও তিনি সেটাকে দেখেছেন নির্মোহ দৃষ্টিতে।
বইয়ের সূচিতে দৃষ্টি দিলে আমরা দেখতে পাই, তিনি শুরু করেছেন জামায়াতে ইসলামীর জিন্ম নিয়ে। জমিয়তে উলামায়ে হিন্দ থেকে বেরিয়ে এসে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, এরপর ভারতে জামায়াতে ইসলামী হিন্দ নামের দলটির জন্ম ১৯৫২ সালে। প্রতিষ্ঠাতা আবুল আলা মওদুদী।
মহিউদ্দিন আহমদ উল্লেখ করেছেন, ১৯৩২ সালের শুরুর দিকে আবুল আলা মওদুদী তারজুমানুল কোরান নামে একটি পত্রিকা কিনে নেন। ১৯৪১ সালের মার্চে এই পত্রিকায় তিনি ‘জামায়াতে ইসলামীর গঠন’ শিরোনামে একটি প্রবন্ধ লেখেন। সমমনাদের কাছে প্রবন্ধটি পাঠিয়ে মতামত চান। ১৯৪১ সালের ২৬ আগস্ট লাহোরে এক সম্মেলনে গঠিত হলো ‘জামায়াতে ইসলামী হিন্দ’। পরদিন ২৭ আগস্ট সাইয়েদ আবুল আলা মওদুদী এই দলের আমির নির্বাচিত হন।
মহিউদ্দিন আহমদ লিখেছেন, ‘জামায়াতের দৃষ্টিভঙ্গি ও কাজকর্ম সম্পর্কে জামায়াত এবং এর নেতারা সব সময় উচ্চকণ্ঠ। তাঁদের সব কিছু তাঁরা যৌক্তিক মনে করেন।’ ১৯৫১ সালের নভেম্বরে করাচিতে জামায়াতে ইসলামী পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৫২ সালের মে মাসে ঢাকার বনগ্রাম রোডের একটি বাসায় পূর্ব পাকিস্তানে জামায়াতের সম্মেলন হয়।
মহিউদ্দিন আহমদ উল্লেখ করেছেন, “জামায়াতে ইসলামী প্রকাশ্যে ইসলামী রাষ্ট্রব্যবস্থা কায়েমের ঘোষণা দিয়েছিল। একই সঙ্গে শুরু থেকেই এ দলটি বৈশিস্ট্যগতভাবে ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’ ও ‘সমাজতন্ত্রের’ ঘোরবিরোধী।”
জামায়াতে ইসলামী হিন্দ, জামায়াতে ইসলামী পাকিস্তান, জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ হয়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। ১৯৪১ সাল থেকে এ পর্যন্ত দলটিকে নানা উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। নিজেদের ইসলামী আন্দোলনের দল বললেও জামায়াত পুরোদস্তুর একটি রাজনৈতিক দল, গুরুত্বের সঙ্গে রাষ্ট্রক্ষমতাকেন্দ্রিক রাজনীতির চর্চা করে। তাদের নিজস্ব ভোটব্যাংক আছে। দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে জামায়াত একটি ভারসাম্য বজায় রাখার চেষ্টা করে। সাম্প্রতিক সময়ে তাদের ভূমিকা নিয়েও জনমনে কৌতূহল আছে। লেখক মনে করছেন, আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বাইরে জামায়াত একটি রাজনৈতিক ‘অপশন’।
বাংলাদেশের বাস্তবতায় জামায়াতকে নিয়ে ভিন্ন আলোচনা আছে। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে জামায়াত পাকিস্তানের পক্ষ নিয়েছিল। দেশ মুক্ত হওয়ার পর দলটি নিষিদ্ধ হয়। রাজনীতির জটিল সমীকরণে একসময় রাজনীতিতে প্রকাশ্যে আসে। নির্বাচনেও অংশ নিয়েছে। আবার হাজির হয়েছে দৃশ্যপটে। যুদ্ধাপরাধের দায়ে জামায়াতের অনেক নেতার বিচার ও দণ্ড হয়েছে। কিন্তু রাজনীতির অঙ্গনে জামায়াত এখনো প্রকাশ্য।
মহিউদ্দিন আহমদ বলেছেন জামায়াতের সুলুকসন্ধানের কথা। অনুসন্ধিত্সু পাঠকগণ এই বইটি থেকে অনেক তথ্যই পাবেন।