চট্টগ্রাম বন্দরের কাছাকাছি লালদিয়া চরে পণ্য ওঠানামার আধুনিক একটি টার্মিনাল করতে চায় বিশ্বের শীর্ষ শিপিং কম্পানি মায়ের্কস লাইন। কর্ণফুলী নদীর তীরে পতেঙ্গা ইনকনট্রেন্ড ডিপোর পাশেই তারা বিনিয়োগের জন্য ৪০ মিলিয়ন ডলার প্রাথমিক প্রস্তাব দিয়েছে। প্রস্তাবটি সরকার বিবেচনায় নিয়েই কাজ শুরু করেছে।
চট্টগ্রাম বন্দর ঘিরে বিশ্বের প্রায় সব শিপিং লাইনের সার্ভিস চালু আছে, কিন্তু শিপিং লাইনগুলোর মধ্যে টার্মিনাল নির্মাণ, পরিচালনার প্রস্তাব এই প্রথম।
চট্টগ্রাম বন্দরে কনটেইনারবাহী জাহাজ পরিচালনা এবং কনটেইনার পরিবহনে শীর্ষ শিপিং কম্পানি হচ্ছে মায়ের্কস লাইন ও সি ল্যান্ড। দুটি প্রতিষ্ঠানই ড্যানিশ কম্পানি এপি মুলার গ্রুপের। এত দিন জাহাজ ও কনটেইনার পরিচালনা করলেও পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল (পিসিটি) পরিচালনা করতে এই গ্রুপটি প্রস্তাব দিয়েছিল। পোশাকশিল্পের শীর্ষ ক্রেতাদের দিয়ে জোর সুপারিশও করেছিল গ্রুপটি।
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব ওমর ফারুক বলেন, ‘প্রস্তাবটি চট্টগ্রাম বন্দরের কাছে এসেছে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে। আমরা সেই প্রস্তাব বিবেচনায় নিয়ে প্রকল্পের একটি ফিজিবিলিটি স্টাডির পরামর্শ দিয়েছি।
এই প্রস্তাব নিয়ে ড্যানিশ টিম আজ সোমবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে একটি বৈঠক করবে। সেখানেই এ বিষয়ে দিকনির্দেশনা মিলবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহারকারীরা বলছেন, এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে এই প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, যেটি টার্মিনাল নির্মাণের জন্য খুবই লোভনীয়।
চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙর থেকে বন্দরের মূল জেটিতে যেতে বর্তমানে একটি বাঁক (গুপ্তা) পাড়ি দিতে হয় বাণিজ্যিক জাহাজকে। এর ফলে চাইলেও অনেক দীর্ঘ জাহাজ এনসিটি, সিসিটি, জিসিবিতে ভিড়তে পারে না। তবে বাঁকের আগে অবস্থান থাকায় বন্দরের পিসিটিতে সবচেয়ে বড় জাহাজটি এরই মধ্যে ভেড়ানো গেছে। যেখানে ২০০ মিটার দীর্ঘ এবং ১০ মিটার গভীরতার জাহাজ ভেড়ানো যাবে। আর লালদিয়া চরে টার্মিনাল হলে এর চেয়েও বড় জাহাজ ভেড়ানো যাবে। আর জাহাজটি সাগর থেকে আসতে বেশি পথও পাড়ি দিতে হবে না।
জানা গেছে, চট্টগ্রাম বন্দর ঘিরে বিশ্বের শীর্ষ বন্দর অপারেটর এবং প্রভাবশালী অর্থনৈতিক শক্তিধর দেশগুলো একের পর এক বিনিয়োগ প্রস্তাব দিচ্ছে। বাংলাদেশের ধারাবাহিক অর্থনৈতিক অগ্রগতির কারণে এসব দেশ বিনিয়োগে আগ্রহ দেখাচ্ছে।
চট্টগ্রাম বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম সোহায়েল গত ২২ আগস্ট সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, চট্টগ্রাম বন্দর ঘিরে আগামী তিন বছরে পাঁচ থেকে সাত বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগে আগ্রহ দেখিয়েছে বিশ্বের শীর্ষ বন্দর অপারেটর ও দেশ। এই বিনিয়োগ নিশ্চিত হলে চট্টগ্রাম বন্দর ঘিরে ব্যাপক পরিবর্তন হবে, যা দেশের অর্থনীতির জন্য সুফল বয়ে আনবে।
তিনি বলেন, তবে বিদেশি বিনিয়োগের যত প্রস্তাবই আসুক না কেন, আমরা যৌথ অংশীদারি এবং যাচাই করে যোগ্য প্রস্তাবটিই বেছে নেব।
বন্দরের হিসাবে, এরই মধ্যে দুবাইভিত্তিক ডিপি ওয়ার্ল্ড, সৌদি আরবভিত্তিক রেড সি গেইটওয়ে, সিঙ্গাপুরভিত্তিক পিএসএ পোর্ট, ভারতের আদানি পোর্ট, কোরিয়ার ইন্টারন্যাশনাল পোর্ট ডেভেলপমেন্ট কো-অপারেশন লিমিটেড, চীনের মার্চেন্ট পোর্টস হোল্ডিংস কম্পানি (সিএম পোর্ট) অন্যতম। এর বাইরে বিশ্বব্যাংক, এডিবি ও জাইকা বন্দর উন্নয়নে সরাসরি বিনিয়োগ প্রস্তাব দিয়েছে।