Saturday, December 7, 2024

পুষ্টি বাগান আনছে স্বনির্ভরতা

অর্থভুবন ডেস্ক

চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার হোগলা এলাকার ফাহিমা-মন্টু দম্পতি। উভয়ে চেষ্টা ও পরিশ্রমে বাড়ির পাশের দেড় শতক পতিত জমিতে গড়েছেন ‘পুষ্টি বাগান’। নিয়মিত পরিচর্যা ও যত্নের ফলে তাদের বাগানে এখন উৎপাদন হচ্ছে গ্রীষ্ম ও শীতকালীন নানা জাতের সবজি। 
 
বাগানের উৎপাদিত এসব সবজি থেকে ৭ সদস্যের পরিবারের পুষ্টির চাহিদা মিটিয়ে কিছু শাকসবজি বিক্রি করেন বাজারে। এতে প্রতি মাসে তাদের আয় হয় অন্তত ৩-৪ হাজার টাকা। যে টাকা তারা এখন অন্য কাজে ব্যবহার করতে পারছেন। শুধু ফাহিমা-মন্টু দম্পতিই নয়, চাহিদা মেটায় ও আয় বাড়ায় চাঁপাইনবাবগঞ্জে এখন জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে পারিবারিক পুষ্টি বাগান। বসতবাড়ির আঙিনাসহ কৃষি জমির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত এবং সারা বছর সবজি ও ফলের চাহিদা মেটাতে ২০২০-২১ অর্থবছরে দেশব্যাপী ‘অনাবাদি পতিত জমিতে ও বসতবাড়ির আঙিনায় পারিবারিক পুষ্টি বাগান স্থাপন প্রকল্প’ হাতে নেয় সরকার। সুফল পাওয়ায় এর জনপ্রিয়তাও দিন দিন বেড়েই চলেছে। ফলে পুষ্টির চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি পরিবারগুলোও হচ্ছে স্বনির্ভর। 
 
ফাহিমা-মন্টু দম্পতির মতো পারিবারিক পুষ্টি বাগান করেছেন একই উপজেলার পার্বতীপুর ইউনিয়নের দায়েমপুর এলাকার কৃষক শামসুল ইসলাম। আগে প্রতি মাসে বাজার থেকে শাকসবজি কিনতে যে টাকা খরচ হতো, তা পুরোটাই এখন সঞ্চয় হয় তার। তিনি আরও বলেন, গোমস্তাপুর কৃষি অফিসারদের সহযোগিতায় আমার বাড়ির ঝোপঝাড় কেটে এ বাগান করতে উদ্বুদ্ধ হয়েছি। আমার এত সুন্দর বাগান দেখে অনেকেই এখন এই বাগান করতে চাইছে। 
 
চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্য বলছে, তাদের সহযোগিতায় এমন পারিবারিক পুষ্টি বাগান করেছেন জেলার অন্তত ১ হাজার ৫৭৮টি পরিবার। এসব পুষ্টি বাগান থেকে প্রতি বছর উৎপাদন হচ্ছে কোটি টাকার নিরাপদ সবজি। এতে বাজার খরচে কাঁচা মরিচসহ দ্রব্যমূল্যের উচ্চ মূল্যের কোনো প্রভাব পড়েনি পরিবারগুলোতে। 
 
কৃষি তথ্য সার্ভিসের সমীক্ষা অনুযায়ী স্থানীয় কৃষি বিভাগ বলছে, জেলায় দেড় শতক জমির এসব পুষ্টি বাগানে বছরে প্রায় ৪০০ কেজি সবজি উৎপাদন হচ্ছে। গড়ে ৩০ টাকা কেজি ধরে এসব বাগানে উৎপাদিত শাকসবজির মোট বাজারমূল্য দাঁড়ায় প্রায় ১ কোটি ৮৯ লাখ ৩৬ হাজার টাকা। খাদ্য নিরাপত্তা অর্জন ও পারিবারিক পুষ্টির চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি অনাবাদি ও পতিত জমিগুলো এভাবে চাষের আওতায় আসায় জাতীয় সবজি উৎপাদনেও ভূমিকা রাখছে পারিবারিক পুষ্টি বাগান। সারা দেশে ৬৪টি জেলার ৪৯১টি উপজেলার ১ লাখ ৪১ হাজার ৭৯২ কৃষক পরিবার এর উপকার পাচ্ছে। এতে লক্ষাধিক পুষ্টিবাগান, অর্থ সাশ্রয়ের পাশাপাশি দিচ্ছে নিরাপদ পুষ্টি। পারিবারিক এসব সবজি বাগান থেকে পুষ্টি চাহিদার ৩.৪৪ শতাংশ ক্যালরি এবং ৪.৩২ শতাংশ প্রোটিনের চাহিদা পূরণ হচ্ছে। 
 
পারিবারিক পুষ্টি বাগান প্রকল্পের বিষয়ে গোমস্তাপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. তানভীর আহমেদ সরকার বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন এক ইঞ্চি জায়গাও যেন পতিত না থাকে। যদি একটি মরিচ গাছ লাগানোর সুযোগ থাকে, সেখানে যেন তা লাগানো হয়। প্রধানমন্ত্রীর সেই অনুশাসনকে লক্ষ করে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর এ পারিবারিক পুষ্টি বাগান প্রকল্পটির কার্যক্রম শুরু করে। এটি বসতবাড়ির আঙিনায় পতিত বা অনাবাদি জমিতে করা হয়। এই প্রকল্পের আওতায় গোমস্তাপুর উপজেলায় প্রায় ৫২২টি পরিবারকে এ যাবৎকালে পারিবারিক পুষ্টি বাগান করার জন্য সামগ্রিক বা সার্বিকভাবে সহযোগিতা ও পরামর্শ দিয়েছি। কিছু পরিবারকে প্রশিক্ষণ দিয়েছি, যাতে এই বাগান সুন্দরভাবে বাস্তবায়ন হয়। কালিয়াকর নামের একটি মডেল রয়েছে। সেই মডেল অনুসরণ করে পারিবারিক পুষ্টি বাগানটি স্থাপন করা হয়েছে। এখানে আমরা পাঁচটি বেডে পাঁচ রকম শাকসবজি লাগানোর পরামর্শ দিয়েছি, যাতে পরিবারটি পাঁচ রকম শাকসবজি খেতে পারে। তাতে পুষ্টি নিশ্চিত হচ্ছে।তারপর ছয় রকমের ফলের চারা দিয়েছি। একজন মানুষের জন্য দৈনিক শাকসবজি ও ফলমূলের ৪০০ গ্রামের চাহিদা থাকে। সে ক্ষেত্রে ছয় ধরনের ফলমূল থেকে তা সম্ভব হচ্ছে। দুই পাশে দুটি মাচা থাকে। মাচা থেকে লতা জাতীয় লাউ, মিষ্টি কুমড়া, শিম ও করলা এই জাতীয় সবজিগুলো হচ্ছে। ফলে সামগ্রিকভাবে একটি পরিবার এক থেকে দেড় শতক পতিত জমিতে এ ধরনের শাকসবজি উৎপাদন করতে সক্ষম হচ্ছে। এখানে রাসায়নিক কিংবা বালাইনাশক প্রয়োগের প্রয়োজন নেই। তবে গুল ও ডিটারজেন্ট পাউডার এ রকম কিছু বালাইনাশক প্রস্তুত করে প্রয়োগ করা হচ্ছে, সেই পরামর্শটা দিচ্ছি। এভাবে যেন বিষমুক্ত সবজি উৎপাদন করতে পারি এবং সেটি যেন স্বাস্থ্যসম্মত ও নিরাপদ হিসেবে গ্রহণ করতে পারে। এই লক্ষ্যটাকে নিয়ে আমরা এগোচ্ছি। 
 
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক ড. পলাশ সরকার বলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জের পাঁচটি উপজেলায় ১ হাজার ৫৭৮টি পরিবারকে পারিবারিক পুষ্টি বাগান করে দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে আশ্রয়ণ প্রকল্পের উপকারভোগীদেরও দেওয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে কৃষি জমির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত হচ্ছে। এটি একটি যুগোপযোগী প্রকল্প।
spot_imgspot_img

ছবিটা তুলে রাখুন ঐতিহাসিক হয়ে থাকবে : ড. ইউনূস

গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক-কর্মচারীদের কল্যাণ তহবিলের ২৫ কোটি টাকা আত্মসাৎ এবং পাচারের অভিযোগে করা মামলায় জামিন পেয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান ও নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস।...

মায়ের ঘুমপাড়ানি সুর শান্তিধারা

আমাদের জোনাকজ্বলা গ্রাম বিদ্যুৎ তখনও দেখেনি। সন্ধ্যার কাছে বিকেল নতজানু হতেই সবুজ পাহাড়েরা মিশকালো হয়ে যায়। ফলে- আমরা চালের ফুটো দিয়ে চাঁদ দেখি, আর...

মাহবুবা ফারজানা নতুন তথ্য সচিব

তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের নতুন সচিব হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন বেগম মাহবুবা ফারজানা। তিনি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) ছিলেন। তাকে সচিব পদে পদোন্নতি...

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here