ই-কমার্সে শৃঙ্খলা আনতে গত বছরের ৬ ফেব্রুয়ারি উদ্বোধন হয় ডিজিটাল বিজনেস আইডেন্টিটি (ডিবিআইডি) রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রম। এরপর দেড় বছর পেরিয়ে গেলেও এ কার্যক্রমে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি নেই। এখনো আশানুরূপ সংখ্যক আবেদন জমা পড়েনি। এ জন্য উদ্যোক্তাদের অনাগ্রহকে দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে উদ্যোক্তারা বলছেন, কঠিন শর্ত ও প্রক্রিয়াগত জটিলতার কারণে এ পর্যন্ত যত আবেদন জমা পড়েছে তার প্রায় ৯০ শতাংশই বাতিল হয়েছে বা অনিষ্পন্ন রয়ে গেছে। এই অবস্থায় ডিবিআইডির জন্য আবেদনে আগ্রহ হারাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও ডিবিআইডি প্ল্যাটফর্ম থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, এ পর্যন্ত আবেদন পড়েছে ৫ হাজার ৭১০টি। এর মধ্যে ৪ হাজার ৯৭৯টি আবেদনই বাতিল হয়েছে অথবা এখনো নিষ্পন্ন হয়নি। ডিবিআইডি পেয়েছে মাত্র ৭৩১টি প্রতিষ্ঠান। অথচ শুধু ই-ক্যাবেরই সদস্য সংখ্যা দুই হাজারের বেশি। আর এফ-কমার্স ব্যবসায়ীর সংখ্যা কয়েক লাখ।
ডিবিআইডির অচলাবস্থা সম্পর্কে ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ই-ক্যাব) সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওয়াহেদ তমাল বলেন, এটা অনেক জটিল করে ফেলা হয়েছে। ট্রেড লাইসেন্সের সঙ্গে ডোমেইনের নাম না মিললে আবেদন বাতিল হচ্ছে, দীর্ঘসূত্রতায় পড়তে হচ্ছে। ডিবিআইডি ছাড়া ব্যাংক অ্যাকাউন্ট করতে পারছে না অনেকে। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা ভোগান্তিতে পড়ছেন বেশি।
কেন অকার্যকর ডিবিআইডি
ডিবিআইডি প্ল্যাটফর্মে প্রথমদিকে কিছু কারিগরি সমস্যা ছিল। এ ছাড়া জটিল একটি শর্ত দেওয়া হয়েছিল, ডিবিআইডি পেতে কোনো বিশিষ্ট ব্যক্তির সুপারিশ লাগবে। এটা নিয়ে উদ্যোক্তারা আপত্তি জানালে পরে তা শিথিল করা হয়। পরবর্তী সময়ে হঠাৎ কোনো ঘোষণা ছাড়াই শর্ত দেওয়া হয়, বাড়িওয়ালার এনআইডি কার্ডের কপি আবেদনের সঙ্গে জমা দিতে হবে। এতে পুরো প্রক্রিয়া আরও গতিহীন হয়ে পড়ে। কারণ যিনি অফিসের জন্য বাড়ি ভাড়া দেন তিনি তাঁর জাতীয় পরিচয়পত্র দিতে অনেক ক্ষেত্রেই রাজি থাকেন না। ই-ক্যাব এই শর্ত পরিবর্তনের জন্য সুপারিশ করলে ঠিকানা প্রমাণের জন্য কোনো ইউটিলিটি বিলের কপি জমা দিতে বলা হয়। তাতেও গতি ফেরেনি নিবন্ধনে।
ডিবিআইডির জন্য আবেদনকারী কিনলে ডট কমের প্রধান নির্বাহী সোহেল মৃধা বলেন, ডিবিআইডির নিবন্ধন প্রক্রিয়া প্রাথমিকভাবে ই-টিনের মতো সহজ করা যেত। তাহলে অনেকেই আগ্রহ পেত। পুরো প্রক্রিয়ায় অনেক নিয়মের জটিলতার কারণে অনেকেই আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে, ডিবিআইডি পেতে সময় লাগছে।
বিতর্কিতরা ডিবিআইডি পেলেও প্রকৃত ব্যবসায়ীরা আটকে যাচ্ছে সম্প্রতি রকমারি ডট কমের সহযোগী একটি প্রতিষ্ঠান ডিবিআইডির জন্য আবেদন করলে প্রথমবার তা বাতিল হয়। দ্বিতীয়বার আবেদন করলে বলা হয়, ট্রেড লাইসেন্স ও ওয়েবসাইটের নাম একই হতে হবে।
এই অজুহাতে অনেকের ডিবিআইডি বাতিল করা হলেও ডিবিআইডি তালিকায় দেখা গেছে ওয়েবসাইট এবং কোম্পানির নাম আলাদা সত্ত্বেও কেমবি টেকনোলজিস লিমিটেডসহ অনেকে পেয়েছে ডিবিআইডি। শুধু তাই নয় বিতর্কিত প্রতিষ্ঠান এবং ই-ক্যাব সদস্যপদ স্থগিত হয়েছে এমন প্রতিষ্ঠানকেও ডিবিআইডি দেওয়া হয়েছে। কিউকম, ইভ্যালির মতো প্রতিষ্ঠানের মালিকেরা শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে জেল খাটলেও তারা ডিবিআইডি পেয়েছে। এমনকি ই-কমার্সের নামে এমএলএম মডেলে গ্রাহকের অর্থ হাতিয়ে নেওয়া এসপিসি ওয়ার্ল্ডও ডিবিআইডি পেয়েছে।
দালালের দৌরাত্মের অভিযোগ নাম প্রকাশ না করার শর্তে ডিবিআইডির জন্য আবেদন করা একাধিক ব্যবসায়ী অভিযোগ করেন, ডিবিআইডি প্রক্রিয়ায় দালালের দৌরাত্ম্য শুরু হয়েছে। সরাসরি যাঁরা আবেদন করেন তাঁরা নানারকম সমস্যার সম্মুখীন হন, নানা অজুহাতে তাঁদের আইডি দেওয়া হয় না। কিন্তু কনসালটেনসি ফার্মের মাধ্যমে আবেদন হলে সহজে আইডি পাওয়া যায়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কেন্দ্রীয় ডিজিটাল কমার্স সেলের উপসচিব সাঈদ আলী বলেন, অনেকের আবেদনে ভুল পাওয়া যাচ্ছে। সেগুলো বাতিল হচ্ছে। টাকা নিয়ে ডিবিআইডি দেওয়া হচ্ছে, সেটা সঠিক নয়। কিছু ফার্ম হয়তো আবেদনের কাগজপত্রের কাজ করে দিচ্ছে। তার বদলে টাকা নিচ্ছে। সেটা হতে পারে।