Friday, July 26, 2024

দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীর হাতে লাঠির বদলে সাদা ছড়ি

তালুকদার রিফাত পাশা

সহকারী পলিসি অফিসার, ইনস্টিটিউট অব ওয়েলবিং বাংলাদেশ

Email: rifatir2@gmail.com

একজন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ব্যক্তির কাছে সাদা ছড়ি চোখের সমতুল্য, কিন্তু সেই সাদা ছড়ি সব দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ব্যক্তি পান না। সর্বশেষ জনশুমারির প্রাথমিক তথ্য থেকে জানা যায়, বাংলাদেশে মোট জনসংখ্যার ১ দশমিক ৪৬ শতাংশ প্রতিবন্ধিতার শিকার, অর্থাৎ ২৩ লাখ মানুষ প্রতিবন্ধী। এর মধ্যে ১১ শতাংশ দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী।

এই বিরাট জনগোষ্ঠীর রয়েছে খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান ও শিক্ষার মতো মৌলিক চাহিদা। এর পাশাপাশি দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের আরও একটি চাহিদা রয়েছে। তা হলো, একটি মানসম্মত সাদা ছড়ি। দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ব্যক্তির জীবনে সাদা ছড়ির গুরুত্ব অপরিসীম। সাদা ছড়ি দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে নিরাপদ ও স্বাধীনভাবে পথ চলতে সহায়তা করে। সাদা ছড়ি ব্যবহারের মাধ্যমে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ব্যক্তি আশপাশের বাধা শনাক্ত করে নিরাপদে পথ চলতে পারেন। অ-প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা বুঝতে পারেন- তিনি একজন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী।

 

দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ব্যক্তির নিরাপদে চলাচলের প্রতীক হিসেবে সাদা ছড়ি ব্যবহারের প্রচলন শুরু হয় মূলত ১৯৩০ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৬৪ সালে অক্টোবর মাসে মার্কিন কংগ্রেসে একটি আইন পাস হয়- প্রতি বছর ১৫ অক্টোবর যুক্তরাষ্ট্রে সাদা ছড়ি নিরাপত্তা দিবস পালন করা হবে। পরে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সংগঠন ‘ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব দ্য ব্লাইন্ড’- যেটি বর্তমানে ‘ওয়ার্ল্ড ব্লাইন্ড ইউনিয়ন’ নামে পরিচিত- ১৯৬৯ সালে প্রথমবারের মতো শুধু দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অংশগ্রহণে শ্রীলঙ্কার রাজধানী কলম্বোতে একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনের আয়োজন করে; যেখানে অংশগ্রহণ করেন ৬৮টি রাষ্ট্র থেকে আসা তিনশর বেশি দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ব্যক্তি। ২৮ সেপ্টেম্বর থেকে ২ অক্টোবর পর্যন্ত পাঁচ দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত এ সম্মেলনে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীর শিক্ষা, নিরাপদ চলাচল ও আর্থসামাজিক উন্নয়নে কিছু প্রস্তাবনা গ্রহণ করা হয়, যার মধ্যে অন্যতম ছিল প্রতি বছর ১৫ অক্টোবর বিশ্ব সাদা ছড়ি নিরাপত্তা দিবস পালন করা। এ প্রস্তাবনার মধ্য দিয়ে সাদা ছড়ি নিরাপত্তা দিবস বৈশ্বিক রূপ লাভ করে। সাদা ছড়ি নিরাপত্তা দিবস পালনের উদ্দেশ্য হলো, দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের নিরাপদ পথ চলার অধিকার প্রতিষ্ঠা করা; অ-প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সহায়তা করার জন্য আহ্বান জানানো; যানবাহনকে সতর্ক করা এবং সব দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ব্যক্তির সাদা ছড়ি প্রাপ্তি নিশ্চিত করা।

 

স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠনগুলো সরকারের নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে নিয়ে দিবসটি পালন করে আসছে। ১৯৯৬ সালে বর্তমান প্রতিবন্ধী ব্যক্তিবান্ধব সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আন্তরিকতায় দিবসটি জাতীয়ভাবে পালন শুরু হয়। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়, সমাজসেবা অধিদপ্তর, জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশন এবং দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের নিয়ে কর্মরত সংগঠনগুলোর আয়োজনে যথাযথ মর্যাদায় বাংলাদেশে নিয়মিত ‘বিশ্ব সাদা ছড়ি নিরাপত্তা দিবস’ পালিত হচ্ছে।

প্রতি বছর দেশজুড়ে নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে জাতীয় সাদা ছড়ি দিবস পালিত হয়। এদিন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের হাতে সাদা ছড়ি তুলে দেওয়া হয়। কিন্তু দিবস শেষ হওয়ার পর দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ব্যক্তির চলার সঙ্গী সাদা ছড়ি পাওয়ার খুব একটা সুযোগ থাকে না। কারণ, বাংলাদেশে সরকারি পর্যায়ে সাদা ছড়ি তৈরির কারখানা নেই। বেসরকারি পর্যায়ে দু-একটি প্রতিষ্ঠান সাদা ছড়ি তৈরি করে। তাদের উৎপাদন ক্ষমতা সীমিত। অধিকাংশ ক্ষেত্রে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ভারত থেকে সাদা ছড়ি আমদানি করে।

জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশনের জেলাভিত্তিক প্রতিবন্ধী ব্যক্তির সেবা ও সাহায্য কেন্দ্রগুলো বার্ষিক একটা বরাদ্দ পেয়ে থাকে। প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্রগুলোয় যে ছড়ি বিতরণ করা হয়, সেগুলো ভারত থেকে আমদানি করা হয়। বরাদ্দকৃত সাদা ছড়ি শেষ হয়ে গেলে স্থানীয় প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্র চাহিদা পাঠায়। এরপর সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় অর্থপ্রাপ্তির ভিত্তিতে দেশ বা দেশের বাইরে থেকে সাদা ছড়ি সংগ্রহ করে। বাংলাদেশে যেসব সাদা ছড়ি তৈরি হয় সেগুলো টেকসই নয়। ফলে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের বারবার সাদা ছড়ির প্রয়োজন হয়। অন্যদিকে ভারত থেকে আমদানীকৃত ছড়িটি স্মার্ট ছড়ি হওয়ায় দাম অনেক বেশি। প্রতিটি ছড়ির দাম ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা।

দিবস পালিত হওয়ার পর সাদা ছড়ি পাওয়ার বিষয়টি দাম, মান, ক্রয় প্রক্রিয়া, অর্থপ্রাপ্তি ইত্যাদি জটিল সমীকরণে পড়ে যায়। ফলে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা প্রয়োজনমতো সাদা ছড়ি পান না। সাদা ছড়ি তৈরি কোনো জটিল প্রক্রিয়া নয়। এটা তৈরি করতে যেসব কাঁচামাল প্রয়োজন তা আমাদের দেশে পাওয়া যায়। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয় হলো, মানসম্মত সাদা ছড়ি তৈরির জন্য এখনও কোনো উদ্যোগ সরকারি পর্যায়ে নেওয়া হয়নি।

বর্তমানে বাংলাদেশে তৈরি একটি ছড়ির দাম ১৮০ থেকে ৩০০ টাকা। এসব ছড়ির স্থায়িত্বকাল খুব কম। অধিকাংশ দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ব্যক্তির আর্থিক সামর্থ্য থাকে না যে বারবার ছড়ি কিনবেন। আর যাঁদের আর্থিক সংগতি আছে তাঁরা দেশের বাইরে থেকে সাদা ছড়ি এনে ব্যবহার করেন। সাদা ছড়ি না পাওয়ার কারণে দরিদ্র দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ব্যক্তির পথ চলার শেষ ভরসা হয়ে ওঠে এক টুকরো কাঠ বা বাঁশ।

আশা করি, এবারের জাতীয় সাদা ছড়ি নিরাপত্তা দিবস থেকে সরকার সব দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ব্যক্তির জন্য সাদা ছড়ি প্রাপ্তির উদ্যোগ নেবে। সব দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ভাইবোনের হাতে কাঠ, বাঁশের টুকরো নয়; সাদা ছড়ি থাকবে।

spot_imgspot_img

ইস্ট আম্বার চাল সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক

বর্ষার সময় বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বেশি থাকে। ফলে আদি চালের বাইরে সাদা সাদা ইস্ট জমে। এটা মূলত প্রাকৃতিক ইস্ট। যা পাউরুটিকে নরম তুলতুলে...

দক্ষ জনশক্তি গড়তে ১১৭ কোটি টাকা দিল কোইকা

নিজস্ব প্রতিবেদক,অর্থভুবন দক্ষ জনশক্তি গড়ে তুলতে বাংলাদেশকে ১১৭ কোটি টাকার আর্থিক সহায়তা দিয়েছে কোরিয়া ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (কোইকা)। গতকাল বুধবার প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান...

বাকিংহাম প্যালেস : এবার ব্যালকনির পেছনের ঘরটি দেখার সুযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক,অর্থভুবন বিশেষ বিশেষ দিনে বা ঘটনার ক্ষেত্রে বাকিংহাম প্যালেসের ব্যালকনি থেকে দেশবাসীর সামনে দেখা দিয়ে থাকেন রাজা বা রানিসহ ব্রিটিশ রাজপরিবারের সদস্যরা। সে কারণে...

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here