অর্থভুবন ডেস্ক
বাতাসে বারুদের গন্ধ, বিস্ফোরণের ধুলো-ধোঁয়ায় আকাশ ঢাকা। এর মধ্যে স্বজনহারাদের আহাজারি আর আহতদের আর্তনাদে ভারী অবরুদ্ধ গাজার আকাশ-বাতাস। সংঘাতের অষ্টম দিনে ইসরায়েল বিমান হামলার পাশাপাশি চালাচ্ছে স্থল অভিযানও। অবশ্য গাজার উত্তরাঞ্চলের ১১ লাখ বাসিন্দাকে দক্ষিণে সরে যেতে বলেছে ইসরায়েলি বাহিনী। বিষয়টি তারা জাতিসংঘকেও জানিয়েছে। সে জন্য গত শুক্রবার ২৪ ঘণ্টা সময়ও বেঁধে দেয় ইসরায়েল। তবে শেষ অবধি ১১ লাখ ফিলিস্তিনির অনেকেই নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তাদের বাসস্থান ছাড়েনি। মৃত্যুর ভয় উপেক্ষা করেই তারা থাকতে চাইছেন জন্মভূমিতে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এর একাধিক কারণ থাকতে পারে। তবে সবচেয়ে বড় কারণ, গাজার ওই অংশ পুরোপুরি খালি করে সেটা ইসরায়েলের কবজায় যেতে দিতে না চাওয়া। আরেকটি কারণ, নিরাপদে যাওয়ার সময়ই হামলার শিকার হওয়ার আতঙ্ক। গত শুক্রবার নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়ার সময়ই ইসরায়েলি এক হামলায় অন্তত ৭০ জন নিহত হয়েছে। আবার নিজেদের ঘরে থাকলেও যেকোনো সময় আছড়ে পড়তে পারে বোমা। তখন ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়ে মরতে হবে।
গাজার বাসিন্দাদের যখন এমন অবস্থা তখন নিয়মনীতিকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে গাজার ঘনবসতি জায়গা খুঁজে খুঁজে বৃষ্টির মতো বোমা ফেলছে ইসরায়েলি বিমানবাহিনী। এর মধ্যে রয়েছে ‘সাদা ফসফরাস’ বোমা। জেনেভা কনভেনশন অনুযায়ী জনবসতি স্থানে এসব বোমা ফেলা পুরোপুরি নিষিদ্ধ। বিবিসি বলছে, আসলে অবরুদ্ধ উপত্যকাটির কোথাও নিরাপদ নয়। বোমার আঘাতে কখনো ভেঙে পড়ছে বাড়ি, কখনো মসজিদ-স্কুল। যে যার মতো দক্ষিণাঞ্চলের দিকে ছুটছে। কিন্তু গুরুতর আহত ফিলিস্তিনিদের বিষয়ে সতর্ক করেছেন স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা। তাদের ভাষ্যমতে, এসব সংকটাপন্ন রোগীদের অন্য জায়গায় সরিয়ে নেওয়াটা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। একই কথা বলেছে জাতিসংঘও।
তবে ইসরায়েলি সশস্ত্র বাহিনী জানিয়েছে, গাজার উপকণ্ঠে পদাতিক ও সাঁজোয়া বাহিনীর সদস্যরা অঞ্চলগুলোতে অভিযান চালিয়েছে। লুকিয়ে থাকা হামাস সদস্য, তাদের অবকাঠামো ও বিভিন্ন সেলগুলো শনাক্ত করতে এই অভিযান।
বিবিসি বলছে, বিমান থেকে প্রচারপত্র ছেড়ে গাজা ভূখণ্ডের উত্তরাঞ্চলের বাসিন্দাদের এলাকা ছেড়ে যাওয়ার নির্দেশনা দিয়েছে ইসরায়েল, এতে টানা বোমাবর্ষণের মধ্যে থাকা ওই অঞ্চলের বাসিন্দারা আরও আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। সংবাদমাধ্যমটি বলছে, দ্রুতই দক্ষিণমুখী পথে মানুষ ও যানবাহনের দীর্ঘ লাইন তৈরি হয়ে যায়। তারপরও গাজা শহরের অনেক বাসিন্দা জানিয়েছেন তারা কোথাও যাবেন না এবং ইসরায়েলের আদেশ অমান্য করবেন।
জাতিসংঘ ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো বলেছে, একসঙ্গে এত মানুষকে এলাকা ছাড়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করা হলে বিপর্যয় দেখা দিতে পারে। তারা ইসরায়েলকে গাজা থেকে অবরোধ উঠিয়ে নিয়ে ভূখণ্ডটিতে মানবিক ত্রাণ প্রবেশ করতে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
ইসরায়েলের সর্বাত্মক অবরোধ চলার কারণে উপায় না পেয়ে গাজার বাসিন্দাদের জন্য চিকিৎসা সহায়তা প্রতিবেশী মিসরে পাঠিয়েছে জাতিসংঘ। সংস্থাটির প্রধান আন্তোনিও গুতেরেস সামাজিক মাধ্যম ‘এক্স’-এ লিখেছেন, জরুরি চিকিৎসা সামগ্রীসহ একটি বিমান মিসরীয় শহর আরিশে অবতরণ করেছে। যা গাজার সীমান্ত থেকে প্রায় ২৮ মাইল দূরে। বিবদমান পক্ষগুলো মানবিক করিডরে সম্মতি হওয়া সাপেক্ষে গাজায় সহায়তা প্রবেশ করতে প্রস্তুত আছে। এ নিয়ে মিসরের প্রেসিডেন্ট আব্দেল ফাত্তাহ সিসির সঙ্গে আলোচনাও করেছেন গুতেরেস।
বিবিসি বলছে, গাজার সীমান্ত জুড়ে ট্যাংক ও প্রায় তিন লাখ সেনা মোতায়েন করে বড় ধরনের স্থল হামলার প্রস্তুতি নিয়েছে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী। তারা জানিয়েছে, ইতিমধ্যেই তারা গাজায় ফিলিস্তিনি রকেট ছোড়ার স্থানগুলোতে সীমিত অভিযান চালিয়েছে এবং হামাসের হাতে বন্দি শতাধিক ইসরায়েলির বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ শুরু করেছে। এমন বাস্তবতায় জর্ডানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আয়মান সাফাদি বিবৃতিতে বলেছেন, ফিলিস্তিনিদের নতুনভাবে বাস্তুচ্যুত করতে ইসরায়েলের যেকোনো পদক্ষেপ এই অঞ্চলের সংঘাতকে ‘গভীর খাদে’ ঠেলে দেবে। ইসরায়েল গাজায় মানবিক সহায়তা বন্ধ করায় এবং ভূখণ্ডের উত্তরে নাগরিকদের সরিয়ে নেওয়ার আদেশ প্রকাশ্যে আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন।