মা-বাবা বা অভিভাবকদের সহজাত চিন্তাভাবনা হলো, তাদের সন্তান যত নাদুসনুদুস হবে, সে তত সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হবে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মাত্রাতিরিক্ত ওজন নানা শারীরিক ও মানসিক সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। একে বলে ‘চাইল্ড হুড ওবেসিটি’ বা শিশুদের স্থূল হয়ে যাওয়া।
কীভাবে বুঝবেন? অনেক অভিভাবকই বুঝতে পারেন না, তাদের সন্তান কি আসলেই মুটিয়ে যাচ্ছে, না ঠিক আছে। এটি বোঝার কিছু নিয়ম আছে। যেমন– প্রতিটি বয়সের একটি কাঙ্ক্ষিত ওজন আছে বা ওজন চার্ট রয়েছে। যদি কারোর ওজন চার্টে দেওয়া নির্দিষ্ট পরিমাপ থেকে ২০ শতাংশ বেশি হয়, তাহলে বুঝতে হবে শিশুটির ওবেসিটি বা মুটিয়ে যাওয়ার সমস্যা রয়েছে। দেহের উচ্চতা ও ওজনের আনুপাতিক হার পরিমাপক বডি মাস ইনডেক্স (বিএমআই) দিয়ে বোঝা যায় কেউ মাত্রাধিক ওজনের কিনা। শিশুর ওজন বেড়ে যাওয়ার অনেক কারণ রয়েছে। এর মধ্যে কিছু হলো–
খেলাধুলা, শরীরচর্চা বা ছোটাছুটি না করা। সারাক্ষণ ইন্টারনেটে থাকা, কার্টুন, গেমস ইত্যাদি খেলা। মাত্রাতিরিক্ত টেলিভিশন দেখা।
শ্লথ, আয়েশি বা শারীরিকভাবে নিষ্ক্রিয় জীবনযাপন।
চিপস, পিৎজা, বার্গার, ফ্রেঞ্চফ্রাই, কোমল পানীয়, পপকর্নের মতো মুখরোচক খাবার বেশি বেশি গ্রহণ। অনিয়মিত খাদ্যাভ্যাস। অপর্যাপ্ত ঘুম। ওষুধের অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার। কিছু ক্ষেত্রে হরমোনের সমস্যা। ওবেসিটি হলে যা ঘটে ক্লান্তি, শারীরিক অবসাদ, ঝিমুনি ভাব, অতিরিক্ত ঘুমানো অথবা নিদ্রাহীনতা। হার্টের অসুখ, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, কিডনি, লিভারের সমস্যা, হাঁটুর সমস্যা, কোমরে যন্ত্রণা, হাড় ক্ষয়, শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি হওয়ার আশঙ্কা। ওবেসিটির সঙ্গে সুগার, রক্তচাপ, কোলেস্টেরল ও ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। একে বলে ‘মেটাবলিক সিনড্রোম’। এর জন্য কয়েক ধরনের ক্যান্সার হওয়ার আশঙ্কাও থাকে। ওবেসিটি থেকে বাঁচার উপায় লাইফস্টাইল বা জীবনধারণের পরিবর্তন করা। জন্মের পর ছয় মাস বয়স পর্যন্ত শিশুকে শুধু মায়ের দুধ খাওয়ান। শিশুকে স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে উৎসাহিত করুন। ফাস্টফুড, জাঙ্কফুড খাওয়ার অভ্যাস কমান; শাকসবজি, ফলমূল বেশি খাওয়ান। টিভি দেখে খাওয়ার অভ্যাস বন্ধ করান। ঘরে বসে গেমস খেলা নয়, বরং শিশুকে আউটডোর গেমস খেলতে উৎসাহ দিন। বেশি ওজনধারী শিশুকে প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট ব্যায়াম করান। মিষ্টি পানীয় বা খাবার কমিয়ে দিতে হবে। ভালো কোনো হরমোন বিশেষজ্ঞের অধীনে শিশুর চিকিৎসা করান। লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, শিশু কার্ডিওলজি বিভাগ, জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল (এনআইসিভিডি)।