লে. কর্নেল ডা. নাসির উদ্দিন আহমদ
রক্তে চিনির মাত্রা যখন স্বাভাবিকের চেয়ে বেড়ে যায়, কিন্তু ডায়াবেটিস নির্ণয়ের নির্ধারিত মাত্রার চেয়ে কম থাকে, সে অবস্থাকে বলে প্রি-ডায়াবেটিস বা প্রাক-ডায়াবেটিস।
এটি ডায়াবেটিস নয়, কিন্তু ডায়াবেটিসের ঘণ্টাধ্বনি। যাদের প্রাক-ডায়াবেটিস রয়েছে, তাদের শতকরা ৫০ জন ৫ থেকে ১০ বছরের মধ্যে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হবে– যদি যাপিত জীবনে পরিবর্তন না আনে।
অভুক্ত অবস্থায় সকালে যদি রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা ৬.১ থেকে ৬.৯ মিলি মোল/লিটার এবং ৭৫ গ্রাম গ্লুকোজ খাওয়ার দুই ঘণ্টা পর যদি ৭.৮ থেকে ১১ হয়, তবে বলা হবে প্রাক-ডায়াবেটিস। তিন মাস সময়কালব্যাপী গ্লুকোজের গড় মাত্রা নির্ণয়ের একটা মাপকাঠি হাল জমানায় ব্যবহার করা হয়। এটি হলো এইচবি এ-১ সি। এর মাত্রা ৬ থেকে ৬.৪ শতাংশ হলেও বলা যাবে প্রাক-ডায়াবেটিস।
এটির তেমন কোনো লক্ষণ নেই। তবে শরীরে বেশ কিছু জায়গায় কালো হয়ে যাওয়া নির্দেশ করে প্রাক-ডায়াবেটিস। ঘাড়ের পেছন দিক, বগলের নিচে এবং ক্ষেত্রবিশেষে কুঁচকিতে কালো আস্তর পড়ে যায়। এটাকে বলে একান্থোসিস নিগ্রিক্যান্স। অনেক স্থূলকায় পুরুষ ও রমণীদের ঘাড়ে এমন লক্ষণ প্রকাশ পায়।
কখন বুঝবেন আপনি প্রাক-ডায়াবেটিস থেকে ডায়াবেটিসের সড়কে?
অত্যধিক তৃষ্ণা, বহুমূত্র, ক্ষুধা বৃদ্ধি, দুর্বলতা, ঝাপসা দৃষ্টি, হাতে-পায়ে ঝিনঝিন অনুভব, বারবার প্রদাহ বা ইনফেকশন, ক্ষত শুকাতে সময় লাগা, ওজন হ্রাস ইত্যাদি লক্ষণ দেখা দিলে। প্রাক-ডায়াবেটিস অবস্থায় রক্তে যে চিনির মাত্রা থাকে, তা আপনার হৃদরোগ এবং কিডনির রোগ তৈরি করার জন্য যথেষ্ট। বরং বলা যায়, বড় বড় রক্তনালির অসুখ এ অবস্থায় বেশি দানা বাঁধে, যেমন– স্ট্রোক, করোনারি সংক্রান্ত হৃদরোগ ইত্যাদি।
প্রাক-ডায়াবেটিস হলে করণীয়
ওজনকে বাগে রাখতে হবে। শতকরা ৫ থেকে ৭ ভাগ শরীরের ওজন কমানোর পাশাপাশি প্রতিদিন ৩০ মিনিট করে জোর কদমে হাঁটলে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমে যাবে ৬০ শতাংশ। পেটের মেদ সবচেয়ে ক্ষতিকর। এটাকে বলা হয় ভিসেরাল ফ্যাট। ইনসুলিনের কার্যকারিতা ভোঁতা করে দেওয়ার জন্য ভিসেরাল ফ্যাট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। খাবারের মেন্যু পাল্টে ফেলুন। খাবারের থালা পূর্ণ হোক হরেক রকম সবজি, সালাদ আর ফলমূলে। সরল শর্করাজাতীয় খাবার কমিয়ে দিন; স্থান দিন ফাইবারসমৃদ্ধ জটিল শর্করায়। সঙ্গে থাকুক আমিষ, অল্পস্বল্প অসম্পৃক্ত চর্বি। ধূমপানকে বিদায় বলুন। কর্মক্ষেত্রে মানসিক চাপ কমিয়ে ফুরফুরে হয়ে উঠুন। নিদ্রা হোক সুখময়। প্রাক-ডায়াবেটিস চলে যাবে।
লেখক : মেডিসিন স্পেশালিস্ট ও এন্ডোক্রাইনোলজিস্ট, সিএমএইচ, ঢাকা।