গরু কেনার সামর্থ্য নেই। তাই পেটের দায়ে বগুড়ার গাবতলী উপজেলার কাগইল ইউনিয়নের দাসকান্দি গ্রামে ঘানি টেনে সরিষা ভেঙে তেল বানিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন আঙ্গুরি বেগম (৬০) ও তার ছেলে আমিনুল ইসলাম (৪০)। তাদের পরিবার কয়েক পুরুষ ধরে ‘কলু’ মানে ঘানিতে তেল বানিয়ে বিক্রি করে। আঙ্গুরি বেগম আগে স্বামী ছহির উদ্দিনের সঙ্গে ঘানি টানতেন। ছেলে আমিনুল নির্মাণ শ্রমিকের কাজ করতেন। ছহির উদ্দিন আড়াই বছর আগে মারা যাওয়ায় বাবার কাঠের ঘানি কাঁধে তুলে নিয়েছেন তিনি। কাঠের জোয়াল আর বাঁশের লাঠি ঠেলে কাঠের ঘানিতে সরিষা ভাঙছেন মা-ছেলে। মা ছেলের হাড়ভাঙা পরিশ্রমে ঘুরছে ঘানি। পরিবারের পাঁচ সদস্যের মুখে খাবার জোগানোর মাধ্যম এই কাঠের ঘানি। সংসারে অভাব অনটন লেগেই আছে। তাই গরু আর কেনা হয় না। বাধ্য হয়ে আমিনুল নিজে গরুর জোয়াল কাঁধে নিয়ে ঘানি টানার কাজ করছেন। অত্যন্ত পরিশ্রমের কাজ। সে জন্য বৃদ্ধ মা ও তার স্ত্রী তাকে ঘানি টানার কাজে সহযোগিতা করেন। প্রতিদিন ঘানিতে ৫ কেজি সরিষা ভেঙে দেড় কেজি তেল আর ৩ কেজি খইল পান, তা দিয়েই চলছে তাদের পাঁচজনের সংসার। তেলবীজ পেষার জন্য পশু দ্বারা চালিত যে দেশীয় যন্ত্রটি কলুরা ব্যবহার করেন সেটিই ঘানি। ঘানি টানবার জন্য কলু মূলত গরু কিংবা ঘোড়া ব্যবহার করেন। ঘানি তৈরি হয় কাঠ দিয়ে। আমিনুল ইসলাম জানান, তাদের কোনো জমিজমা নেই। একটা গরু ও যন্ত্রচালিত ঘানি কেনার সাধ্য নেই তাদের। আঙ্গুরি বেগম জানান, বিয়ের পর থেকেই তিনি কাঁধে ঘানি টানার কাজ করছেন। তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা আহসানুল কবির ডালিম বলেন, আধুনিকতার এ যুগে কাঠের ঘানে টেনে মা-ছেলের জীবনধারণ সত্যি অমানবিক। তাদের পুনর্বাসনে সচ্ছলদের এগিয়ে আসা প্রয়োজন। কাগইল ইউপি চেয়ারম্যান আবদুর রশিদ মোল্লা জানান, সহায়তাদানের জন্য তিনি ব্যক্তিগত উদ্যোগ নেবেন। পাশাপাশি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গেও কথা বলবেন।